রাজধানী ঢাকা ছিল এক সময় করোনার হটস্পট। এখন বাইরের জেলাগুলোতে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫৪ কোভিড রোগী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এর পর রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ১২ জন করে। এ ছাড়া খুলনায় আটজন, বরিশালে চারজন, সিলেটে দুজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ একদিনে ৩ হাজার ৮৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি চুয়াডাঙ্গায়, ৬৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। আমাদের বিভন্ন ব্যুরো অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন কোভিড রোগী ও চারজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় করোনায় মারা গেলেন ৫৬ জন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৫৯ জনের। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৬ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এদিকে সাতক্ষীরায় সংক্রমণের হার না কমায় চলমান লকডাউন তৃতীয় দফায় ২৪ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ঘোষণা করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে।
বাগেরহাট : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ৫২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার অনুমাতে সংক্রমণের হার ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা গত দিনের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মোংলা উপজেলাতে ৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। করোনার এ হটস্পট উপজেলায় তাই তৃতীয় দফায় আরও সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। মোংলার সীমান্তবর্তী শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা দুটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণের হার। এদিকে বাগেরহাটে পৌঁছেছে সিনোফার্মের প্রায় ১৭ হাজার ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা, যা বর্তমানে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ইপিআই সেন্টারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার চিঠি হাতে পেলে খুব শিগগির টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। ৮ হাজার ৪০০ জনকে এ টিকা দেওয়া যাবে।
নড়াইল : গত ২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে ১২০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। এদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নড়াইলেও স্থানীয়ভাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত রয়েছে।
নাটোর : কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে নাটোরের করোনা পরিস্থিতি। সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ৬৫ জন আক্রান্তের তথ্য মিলেছে। আক্রান্তের হার ২৩ দশমিক ৫৫ ভাগ। এ ছাড়া ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নাটোর সদর হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইল : জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিনও ছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪৫ জনের দেহেই মিলে করোনার জীবাণু। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৭০ জন। আর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৯৭ জন।
শেরপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৯ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে শেরপুরে। তাদের মধ্যে সদরেই ৪৮ জন এবং বাকি একজন নকলা উপজেলার। সব মিলিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত ১ হাজার ২ জন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর (৩১) মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া : বগুড়ায় এক নারীসহ আরও চারজন প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়। এ নিয়ে গত তিন দিনে ১১ জনের প্রাণ কেড়ে নিল মরণঘাতী ভাইরাসটি। মৃতদের তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া চারজন হলেনÑ নওগাঁর আবদুর রউফ (৭৬) ও অজিত কুমার (৩০), বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুদু প্রামাণিক (৬৭), জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকার মাহফুজা (৬০)। এদের মধ্যে আবদুর রউফ টিএমএসএস হাসপাতালে, অজিত ও মাহফুজা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় দুদু প্রামাণিকের।
কুড়িগ্রাম : সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রামণ বাড়ছে প্রতিদিন। ৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৪১২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। শনাক্ত বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় জেলায় করোন সংক্রামণের হার বাড়ছে। তাই কুড়িগ্রাম পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে।
নোয়াখালী : নতুন করে আরও ৫৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এ জেলায়। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। করোনা সংক্রমণ রোধে নোয়াখালী পৌরসভা ও সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে তৃতীয় দফায় আরও সাত দিন বাড়ানো হয়েছে বিশেষ লকডাউন, যা চলবে আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা ও লকডাউন অমান্য করায় পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বরিশাল : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার সংক্রমণ হঠাৎ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বরিশাল অঞ্চলে। এ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৫০ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ১৪ শতাংশেরও বেশি, যা দুই দিন আগেও ছিল মাত্র ৬ শতাংশ ৬ ভাগ। আর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে পিরোজপুরে নতুন করে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।