ঢাকাঃ অবশেষে রাজনীতির খেলায় কুপোকাত হলেন ইসরাইলের দোর্দ- প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মাথা নিচু করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এ খবর দিযেছে অনলাইন বিবিসি।
নতুন এই সরকারের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা। একে তারা ইসরাইলের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র বলেছেন, আমাদের অবস্থান সবসময় পরিষ্কার।
আমরা জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ১৯৬৭ সালের সীমান্ত বজায় রেখে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চাই। অন্যদিকে হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, ইসরাইল হলো দখলদার এবং ঔপনিবেশিক দেশ। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য প্রতিরোধ আন্দোলন করে যেতেই হবে। ওদিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেনেটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও টেকসই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চান।
অপ্রত্যাশিত এক জোট গঠন করে ডানপন্থি নেতা বেনেট রোববার পার্লামেন্টে আস্থাভোটের মুখোমুখি হন। তাতে ৬০-৫৯ ভোটে তার জোট ক্ষমতা বুঝে পায়। এর মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের ১২ বছরের ক্ষমতার ইতি ঘটেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ইসরাইলের জনগণের স্বার্থে কাজ করার কথা বলেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার অগ্রাধিকারে থাকবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সংস্কার এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা। উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তিনি হাত মিলিয়েছেন ইয়েশ আতিদ পার্টির প্রধান ইয়াইর লাপিডের সঙ্গে। তাদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে ক্ষমতার প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন নাফতালি বেনেট। অর্থাৎ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি।
এরপরই ক্ষমতার বাকি দু’বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্ব হস্তান্তর করবেন মধ্যপন্থি ইয়াইর লাপিডের কাছে। এ জন্য তারা ডান, বাম, জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মীয় দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠন করেছেন। তাদের জোটকে ভোট না দেয়ার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু তার ডাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি সাড়া দেননি। ফলে প্রধানমন্ত্রী এখন বেনেট। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হারালেও নিজের দল লিকুদ পার্টির প্রধান হিসেবে থেকে যাবেন নেতানিয়াহু।
তিনি নতুন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘শিগগিরই এই সরকারকে উৎখাত করা হবে’। অনলাইন বিবিসি লিখেছে, রোববার ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে আস্থাভোটের সময় নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আবার ক্ষমতায় আসবো। এরপর নতুন জোট সরকারের বিষয়ে এমপিরা ভোট দেন। তাতে হেরে যাওয়ার পরই নেতানিয়াহু হেঁটে যান নাফতালি বেনেটের দিকে এবং তার সঙ্গে হাত মেলান।
আস্থাভোটে জয় পাওয়ার পর ভাষণে বেনেট বলেন, এটা কোন শোকের দিন নয়। এটা হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সরকারের পরিবর্তন। এর বেশি কিছু নয়। আমরা এমন কাজ করবো, যাতে কোনো ব্যক্তিই ভীত শঙ্কিত না হন। যারা এ রাতে নেচে গেয়ে আনন্দ করছেন, সেলিব্রেট করছেন, তাদের এই নাচগান যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়। আমরা কারো শত্রু নই। আমরা সবাই মিলে এক জাতি।
পুরনো অভ্যাস যায় না
পার্লামেন্টে আস্থাভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উঠে গিয়ে নেসেটে প্রধানমন্ত্রীর চেম্বারে রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। এর পরিবর্তে তার বসার কথা ছিল বিরোধী দলের বেঞ্চে। কিন্তু ওই যে ১২ বছরের পুরনো অভ্যাস। চেয়ার তাকে ডাকেই অথবা তিনি চেয়ারকে ভুলতে পারেননি। তাই ফল ঘোষণার পরও তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে গিয়ে বসে পড়েন। এটা ছিল ইসরাইলের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যখন দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী আক্ষরিক অর্থেই ক্ষমতাচ্যুত হলেন। তবে ক্ষমতাচ্যুত হলেই শেষ নয়। তাকে থাকতে হচ্ছে এই পার্লামেন্টেই। বসতে হবে বিরোধী দলের চেয়ারে। সেখান থেকেই এই সরকারকে ‘উৎখাতের’ ফর্মুলা আবিষ্কার করতে হবে। হয়তো তা তার জন্য খুব সহজও হতে পারে। কারণ, ইসরাইলে নতুন যে সরকার গঠন করা হয়েছে তাতে অনেক বেশি অংশ নিয়েছে অনেক দল। ফলে সামান্য মতানৈক্য থেকে বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কাও কম নয়। বলা হচ্ছে, এই সরকার সবচেয়ে অস্থিতিশীল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটকে তার নিজের কাজ কমিয়ে দিয়ে দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে কাজ করতে হবে বেশি।