সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে অনলাইনে আড্ডা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এক সময় ফেলা হতো জুয়ার ফাঁদে। টার্গেট প্রধানত যুবসমাজ, বিশেষ করে কাজের উদ্দেশে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন যারা। নিষিদ্ধ এ আড্ডার নিরাপত্তা নিñিদ্র করতে এতে প্রবেশে বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করতে হতো।
অনলাইনে এভাবে ফাঁদে ফেলে গত এক বছরে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। সেই চক্রেরই দুই সদস্য নিধু রামদাস (২৭) ও মো. ফরিদ উদ্দিনকে (৪০) সিলেটের গোয়াইনঘাট থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। তাদের কাছে থেকে জব্দ করা হয়েছে লেনদেনে ব্যবহৃত চেক বই, ডেবিট কার্ড, বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর ও মোবাইল ফোন। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ‘স্ট্রিমকার’ নামের অ্যাপটিতে সংযুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দু’ধরনের আইডি রয়েছে। ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে বিশেষ কিছু চক্র অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তরুণীদের দিয়ে হোস্টিং করিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করছে। তাদের টার্গেট মূলত যুবক এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন ব্যবহারকারীরা। এ জন্য বিনস নামের ভার্চুয়াল মুদ্রা
কিনতে হয় তাদের। ওই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে হতো ব্যবহারকারীদের।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ ওই অ্যাপটির অনেক এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশ। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করেন। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় মামলা করা হবে। এ ছাড়া অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদেরও আইনের আওতায় এনে গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রেপ্তারকৃত নিধু রামদাসের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ১০ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রায় তিন কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেকে সংশ্লিষ্ট বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান জানান, চক্রের অন্যদের বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে ৩০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।