দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন। গ্রামবাসীর টাকায় করা রাস্তার কাজ দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এঘটনায় গত বুধবার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সিদখাই গ্রামের মৃত হাজী আব্দুর রহমানের ছেলে মনু মিয়া।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সিদখাই গ্রামের জনসাধারণ গ্রামের আয় ও মসজিদের ফান্ডের টাকা দিয়ে সিদখাই জামে মসজিদের সামন থেকে শফিকুল ইসলামের বাড়ির সামন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ’ মিটার রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করেন গ্রামবাসী। অন্যদিকে গ্রামের মনু মিয়ার বাড়ি থেকে সিদখাই জামে মসজিদের সামন পর্যন্ত প্রায় ১শ’ মিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ করেন মনু মিয়া। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন গ্রামের এই সমস্ত কাজ দেখিয়ে সরকারি প্রকল্পের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) সাধারণ কর্মসূচির আওতায় উপজেলাওয়ারী ১ম পর্যায় নন-সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে দগাপাশা ইউনিয়নের “৫নং ওয়ার্ডের সিদখাই গ্রামের মনু মিয়ার বাড়ি হতে স্কুলের রাস্তা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট” নামে একটি প্রকল্প দেয়া হয়। এই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিদখাই গ্রামের প্রধান রাস্তা শফিকুল ইসলামের বাড়ির সামন থেকে সিদখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে সিদখাই জামে মসজিদের সামন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ’ মিটার রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়েছে, সেই সঙ্গে মসজিদের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে মনু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত আরো ১শ’ মিটার মাটির রাস্তা মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে।
দরগাপাশা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সিদখাই গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, সিদখাই গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাগবে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তাটি নিজেদের টাকায় তৈরী করেছি। গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং মসজিদ ফান্ড থেকে টাকা ধার নিয়ে গ্রামের শফিকুল ইসলামের বাড়ির সামন থেকে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ’ মিটার রাস্তায় মাটি ভরাট করা হয়।
সিদখাই জামে মসজিদের মুতাওয়াল্লী মো. কদ্দুস আলী বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর ধরে মসজিদের মুতাওয়াল্লী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। চেয়ারম্যান সাহেব মনু মিয়াকে তার বাড়ির রাস্তার কাজ করানোর জন্য বলেছিলেন। তবে চেয়ারম্যান গ্রামবাসীর করা রাস্তার কাজ দেখিয়ে সরকারি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে গ্রামের লোকজনদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। চেয়ারম্যান কোন টাকা দেন নাই। আর গ্রামবাসীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার প্রশ্নই আসে না।
এসময় গ্রামের আফজাল মিয়া, মধু মিয়া, মজমিল হক, আনোয়ার আলী, আলতাব আলী, আব্দুল আলী, আসাদ আলী, তোরাব আলী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন গোপনে আমাদের রাস্তার কাজ দেখিয়ে সরকারি টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের পর চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন, ইউপি মেম্বার সমুজ আলীকে দিয়ে সামান্য টাকা দিয়ে সমোঝতা করতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
অভিযোগকারী মনু মিয়া বলেন, আমার বাড়ির দক্ষিণ পার্শ্বের প্রায় ৫০ টি পরিবার আছে এবং হাটি বাড়ি হিসাবে লোকজন বর্ষা মৌসুমে আমার বাড়ির উপর দিয়ে মসজিদের পাশ হয়ে গ্রামের প্রধান রাস্তায় চলাচল করে থাকে। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছিলাম রাস্তাটি করে দেয়ার জন্য। তখন তিনি আশ্বস্ত করে বলেছিলেন তুমি তোমার কাছ থেকে কাজ করিয়ে ফেল, জুন-জুলাইয়ে সরকারি বরাদ্দ আসলে তোমাকে ২ লাখ টাকা দিয়ে দেবো। আমি সেই অনুমানে ধার দেনা এবং গ্রামের আরো লোকজনদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার কাজ করিয়েছি। কাজ করার পর একাধিবার যোগাযোগ করি। পরে আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার এই প্রকল্পের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পুরোটাই চেয়ারম্যান তার ইউপি সদস্য মিলে আত্মসাৎ করেছেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ইউপি মেম্বার সমুজ আলী বলেন, এই প্রকল্পের পিআইসি কমিটির সভাপতি আমি, আমি নিজেই মনু মিয়াকে ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে কোন ডকুমেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, টাকা দেওয়ার কোন ডকুমেন্ট নাই। তবে পিআইসি কমিটির সভাপতি আমি থাকলেও কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন মনু মিয়া নিজেই।
দরগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মনু মিয়া রাস্তার জন্য আমার কাছে দাবি করেছিলেন। টাকাটা ইউপি সদস্যের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার উজ জামান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটি কমিটি গঠন করে তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।