রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে করোনা, সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


তিনদিন আগ পর্যন্ত কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে করোনা শনাক্তের হার ছিল এক শতাংশের নিচে। গত তিনদিনে তা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশে। ক্যাম্পে করোনা আক্রান্তের হার জাতীয়ভাবে করোনা সংক্রমণের হারকেও (১২%+) ছাড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অবাধ যোগাযোগে কক্সবাজার জেলা তো বটেই, আশপাশের জেলাগুলোতেও উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বাড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ক টাস্কফোর্সের ৩৪তম সভা শেষে বুধবার সন্ধ্যায় এমনটাই জানালেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় জাতিসংঘের অধীন বিভিন্ন সংস্থা এবং রোহিঙ্গাদের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বৈঠক শেষে নিজ দপ্তরের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সচিব। বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের করোনা নিয়ন্ত্রণ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটা আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ক্যাম্প এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কাঁটাতারের বেড়ার আওতায় নিয়ে আসার চলমান কার্যক্রম অনেকটা এগিয়েছে। চলতি বছরেই শতভাগ কার্যক্রম শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবাধ যোগাযোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ক্যাম্প এলাকায় সংঘটিত অপরাধও নিয়ন্ত্রণে আসবে। সরকার ক্যাম্প এলাকায় যে বেড়া নির্মাণ করছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জাতিসংঘের। জাতিসংঘ চায় রোহিঙ্গারা মুক্তভাবে চলাচল করুক। তারা এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছে। ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের বিষয়েও প্রায় অভিন্ন শর্ত দিয়েছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রথমত এগুলো শর্ত নয় বরং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ। তারা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে। কিন্তু এটা বিবেচ্য যে, যেহেতু তারা বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে রয়েছে আর বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ সুতরাং তাদেরকে একটি বেষ্টনীর মধ্যে নিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই। সচিব বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায়শই নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের খবর দুনিয়া দেখে। সেখানে সবল রোহিঙ্গারা দুর্বলের ওপর আক্রমণ করে। অস্ত্র, মাদক এবং নারী পাচারের সঙ্গে অনেকে জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্প এলাকায় উগ্রপন্থার উত্থানেরও একটা আশংকা রয়েছে। এসব অপরাধে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয়দেরও সহায়তা পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনসহ সকলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তারা সবাই বোঝেন বাংলাদেশ সরকার এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার চেষ্টা করছে। কারও মানবাধিকার খর্ব করার জন্য নয়। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের টিকা প্রদানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকারও চায় রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত টিকা রোহিঙ্গাদের দিয়ে দেয়ার অনুরোধ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেটা বলেছে তা হলোÑ জাতিসংঘ যদি রোহিঙ্গা এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য টিকার ব্যবস্থা করতে পারে তাতে সরকারের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণকে টিকার আওতার বাইরে রেখে কোভ্যাক্সের টিকা কেবলমাত্র রোহিঙ্গাদের প্রদান করা সরকারের জন্য অসম্ভব কর্ম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *