সীমান্ত জেলাগুলোয় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে বিধিনিষেধ। কড়াকড়ির মধ্যেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকালও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরটিপিসিআর ল্যাবে ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০১ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৫৯ শতাংশ। সাতক্ষীরায় সংক্রমণের হার ৫৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। জেলায় ১৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৩ জন করোনা পজেটিভ হন। নাটোর ও নওগাঁয় অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ডাবলু কুমার ঘোষ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরটিপিসিআর ল্যাবে ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০১ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ৫৯, শিবগঞ্জে ২, গোমস্তাপুরে ৬ ও নাচোলে ৩৪ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় ৫৯ শতাংশ। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৪৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ৬৮, শিবগঞ্জে ৫, গোমস্তাপুরে ৩, নাচোলে ৬ ও ভোলাহাটে ৩ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া জিন এক্সপার্ট টেস্টে ৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল জানান, লকডাউনের মধ্যেও জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। লকডাউনের চতুর্থ দিনেও দেখা গেছে সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৭ জনের শরীরে নমুনা পরীক্ষায় ১০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি পরীক্ষা বিবেচনায় ৫৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সংক্রমণের এ হার একদিনে সর্বোচ্চ। জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৮৯ জন।
করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন এক নারী ও আপন দুই সহোদরসহ ৫ জন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়ার মনিরা খাতুন, দেবহাটা উপজেলার বদরতলার সুশাংক কুমার, শ্যামনগর উপজেলার পাতাখালীর দুই সহোদর তোহা ও কামাল এবং সদর উপজেলার হাওয়াখালী গ্রামের আবুল হোসেন। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৩২ ব্যক্তি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৮ জন।
ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে লাগাম টানতে প্রশাসনকে কিছুটা কঠোর হতে দেখা গেছে। পুলিশ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে আরও বেশিসংখ্যক চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। জেলায় বাড়ানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিনে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, মামলা করা হয়েছে ২১৭টি এবং এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও লকডাউনের বিধিনিষেধ প্রতিপালন না করায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৫৪৩ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এখনো জেলায় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। কিছু কিছু মোটরচালিত যান চলতে দেখা গেছে কিছু এলাকায়। এ ছাড়া সীমিত সময়ের জন্য সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলছে ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২০টি বেড রয়েছে। সদর হাসপাতালে রয়েছে ৩৫টি। প্রয়োজনে সদর হাসপাতালের ১০০ বেড পুরোটাই করোনা ইউনিটে পরিণত করা হবে। মেডিক্যালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সদর হাসপাতালেও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা অচিরেই চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
সিভিল সার্জন বলেন, সীমান্ত এলাকাগুলোয় প্রচুর মানুষ সর্দি-জ¦র-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওই এলাকাগুলোয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হবে। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয় আইইডিসিআরে। ভারত থেকে সাতক্ষীরায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩৩৭ জনের মধ্যে ১৭ জন করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। তাদের জেনেটিক স্যাম্পল পাঠানো হয়েছিল আইইডিসিআরে। তবে সেখান থেকে সরাসরি কোনো উত্তর আমরা পাইনি। তবে সীমান্ত এলাকাগুলোয় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্যাম্পল আমরা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আইইডিসিআরে পাঠাব।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সে জন্য লকডাউন সফল করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের বেপরোয়া আচরণ রুখে দিচ্ছে পুলিশ। অপ্রয়োজনে যাতে কেউ ঘরের বাইরে না আসতে পারে, সে জন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলার দক্ষিণে দুই প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া লকডাউন সফলে থানা ও ফাঁড়ির পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নওগাঁ থেকে আসাদুর রহমান জয় জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় তিনজন মারা গেছে। মান্দা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় একজন করে মারা যান। এ সময়ে নতুন করে ৩৬ ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হয়েছেন। আক্রান্তের হার ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৫৪০ জনে।
দিনাজপুর থেকে রতন সিং জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ দিনে ৮৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক ফিরে এলে তাদের মধ্যে ১৮ জনের সংক্রমণের নমুনা পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর ৬৯ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ১৪১ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ৪৭ জনের সংক্রমণের পজিটিভ পাওয়া গেছে।