ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা। সেখানকার বেসরকারি পরশ হাসপাতাল। এর মালিক অরিঞ্জন জৈন। তার হাসপাতালে করোনা রোগীদের নিয়ে অক্সিজেন সঙ্কটের এক পরীক্ষা চালিয়েছেন। তার ৫ মিনিটের একটি অডিও প্রকাশ হয়েছে। তাতে তাকে দম্ভ করে বলতে শোনা যায়- আমি অক্সিজেন বন্ধ করে দিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে রোগীরা নীল হয়ে গেল। এ ঘটনায় প্রদেশ সরকার এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এপ্রিলে যখন হাসপাতালে হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র, তখন তিনি মহড়া হিসেবে রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারপর ধারণ করা তার ওই অডিও প্রকাশ হয়েছে। সেখান থেকে দেড় মিনিটের অডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়, আমাদেরকে বলা হয়েছে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী অক্সিজেন পাচ্ছেন না, তাই রোগীদের অক্সিজেন খুলে দাও। মোদি নগরে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা পরিবারগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। কেউ কেউ আমাদের কথা শুনতে আগ্রহ দেখালেন। তারা চলে যেতে রাজি হলেন। কিন্তু কিছু পরিবার হাসপাতাল ছাড়তে রাজি হলেন না। আমি বললাম, ঠিক আছে। চলো আমরা একটা মহড়া করি। এতে আমরা দেখতে চাই কে মরে। আর কে বাঁচেন। ফলে সকাল ৭টার সময় আমরা এটা করলাম। মহড়া শেষ হলো। কেউ এ বিষয়ে জানতো না। এরপর আমরা ২২ জন রোগীকে শনাক্ত করলাম। আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে, তারা মারা যাবেন। এই ভাবে ৫ মিনিট মহড়া করা হয়েছিল। এ সময়ে রোগীরা নীল হয়ে যেতে শুরু করেছিলেন।
আগ্রার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট প্রভু এন সিং মিডিয়ার কাছে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, যেদিন ওই অডিও-ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে, সেদিন অক্সিজেনের অভাবে কেউ মারা যাননি। তবু তদন্ত চলবে। তিনি আরো বলেন, ওইদিন অক্সিজেন সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল এবং পীড়া দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমরা তা পুনঃস্থাপন করেছিলাম। ওই হাসপাতালে ২৬ ও ২৭ শে এপ্রিল সাতজন করোনা রোগী মারা গেছেন। এ হাসপাতালে আছে অনেক আইসিইউ বেড। কিন্তু সেখানে ২২ জন মারা গেছেন এ খবরটি সত্য নয়।
কিন্তু অডিও ক্লিপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতাল মালিক ইঙ্গিত দেন যে, তাকে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরকে অক্সিজেন ব্যবহারে প্রশাসনিক পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে আমরা রোগীদের ভাগ করে ফেলি। এক গ্রুপে রাখি যাদের উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন আছে, তাদেরকে। অন্যগ্রুপে রাখি যাদের অক্সিজেন লেভেল কম তাদেরকে। যদি অক্সিজেন ফুরিয়ে যায় অথবা সরবরাহ পেতে বিঘ্ন ঘটে তাহলে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া যাবে এবং রোগীরা অক্সিজেনের ওপর কতটা নির্ভরশীল তা বোঝার চেষ্টা করেছি আমরা। তাই জরুরি অবস্থায় আমরা কিভাবে কাজ করবো তা অনুধাবনের জন্য মহড়া করেছি। এর অর্থ এই নয় যে, আমরা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের সুইচ অফ করে দিয়েছি। আমরা অক্সিজেন সুইচ অফ করিনি। ভিডিওতে এ কথা আমি পরিষ্কার করে বলিনি। আমি বলেছি, সকাল ৭টায় মহড়া হয়েছে।
পরশ হাসপাতালের ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি সেখানকার এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন বিজেপিকে। রাহুল গান্ধী ওই ঘটনার পর পরই হিন্দিতে একটি টুইটে লিখেছিলেন, বিজেপি সরকারের অধীনে অক্সিজেন এবং মানবতা- দুটি ইস্যুতেই ভয়াবহ ঘাটতি আছে। তিনি বিপজ্জনক এই অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার দাবি করেন। অক্সিজেন সঙ্কটে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।