ঢাকা: গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে নিয়ন্ত্রণহীন করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করতে গিয়ে বলা চলে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে। বিশেষ করে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা এবং কাজ হারানো হতদরিদ্র মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সেই সীমাবদ্ধতা নগ্নভাবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এমনকি অনেক চেষ্টার পরও অচল হয়ে থাকা শিক্ষার চাকা সচাল করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে আরও অনেকক্ষেত্রেই।
এতকিছুর পরও বলতে হবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের অনেক অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের যে ভয়াবহ অবস্থা আমরা দেখেছি, তেমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। সেটা যে কোনো কারণেই হোক না কেন; বাংলাদেশ এখনো করোনাভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়নি।
করোনাভাইরাস নিয়ে দেশ-জাতি যখন চিন্তিত, তখন আরেক শঙ্কার খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলতি মাসের শুরুতে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বঙ্গোপসাগরে একাধিক গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আছে শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড়ের সম্ভাবনাও। আর ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, প্রতিবেশী দেশ ভারতে আগাম বন্যা শুরু হয়ে গেছে। কেরালাসহ কয়েকটি রাজ্যে সেই বন্যার পানি ঢুকেও পড়েছে। এই ঘটনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আশঙ্কাকে অনেকটাই নিশ্চিত করছে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, ভারতের বন্যার এই পানি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে প্লাবিত করে নতুন বন্যার জন্ম দেয়।
এই অবস্থায় আমাদের বসে থাকার সুযোগ নেই। কেননা আগাম বন্যা মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং খেতের ফসল রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে বন্যার্তদের আশ্রয় ও খাবার নিশ্চিত করতে হবে। এটা ঠিক, অভিজ্ঞতার কারণেই যে কোনো প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলায় বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে। তারপরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
আমরা মনে করি, আবহাওয়া অধিদপ্তার যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। শুধু তাই নয়, সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে হবে। তাতে জনগণের জানমাল রক্ষার সুযোগ অনেকটা বাড়বে।