সিলেট নগরভবনে হামলা চালিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা। তারা নগর ভবনের চত্বরে থাকা কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও নগর ভবনের কর্মচারীরা ধাওয়া করে শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেন। পরে শ্রমিকরা নগরীর বারুতখানা এলাকায় অবরোধের চেষ্টা চালালে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকালে নগরীর কামরান চত্বর, কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার এলাকা পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট।
এসব রিকশা চলাচলে সিটি করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিন আগে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শেখঘাট ও আশপাশ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে আসা হয়। এদিকে আটক এসব রিকশা ছাড়িয়ে নিতে রিকশা শ্রমিক ও মালিকরা সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরনা দেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের এই আহ্বানে সাড়া দেয়া হয়নি। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে কয়েকশ’ রিকশা শ্রমিক জড়ো হন সিটি করপোরেশনের সামনে কামরান চত্বরে। সেখানে তারা অবস্থান নিয়ে আটক রিকশা ছেড়ে দিতে বিক্ষোভ করেন। কামরান চত্বরে রিকশা চালকদের অবস্থানের কারণে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে রিকশা চালকদের বিক্ষোভের সময় নিজ কার্যালয়ে বসা ছিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ দৃশ্য দেখে তিনি শ্রমিকদের প্রশমিত করতে নগরভবনের নিচতলায় নেমে আসেন। এমন সময় সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটক তালা দিলে শ্রমিকরা সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা থেকে বৃষ্টির মতো সিটি করপোরেশনের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। রিকশা শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে সিটি করপোরেশনের ভেতরে থাকা কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। কয়েকজন কর্মচারীরাও আহত হন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এদিকে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে এসে যোগ দেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরাও। তাদের ধাওয়ার মুখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকরা পিছু হটে এবং বন্দরবাজার অভিমুখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই নগরীর বারুতখানা এলাকায় অটোরিকশা শ্রমিকরা অবরোধ দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারা বারুতখানা এলাকায় যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। পরে পুলিশ এলে শ্রমিকরা চলে যায়। ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের নিয়ে জরুরি সভা করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর আগে সাংবাদিকদের মেয়র জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের ভেতরে হামলা নজিরবিহীন ঘটনা। তারা হঠাৎ করে সিটি করপোরেশনের ভেতরে হামলা চালিয়েছে। তারা কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক আটককৃত ব্যাটারিচালিত রিকশা ছেড়ে দেয়া ও ব্লু-বুক দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা উন্মুক্তভাবে চলাচলের দাবিতে সিলেট মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা সমাবেশ করেছেন। বেলা ১১টায় মদিনা মার্কেটে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু বকর সিদ্দিক। মহানগর ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি শাহ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান খানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-সিলেট শহর রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনাই, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুল জলিল, আব্দুস সোবহান, বাচ্চু মিয়া, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, প্রফেসর নুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন শহীদুল ইসলাম আকন্দ, শাহজাহান, আবুল হোসেন, আব্দুল খলিক, আক্কাস আলী, আইয়ুব আলী, কাওছার আহমদ, খাজা মিয়া, আব্দুল জব্বার প্রমুখ। এ ছাড়াও মহানগরীর অসংখ্য নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে আটককৃত ব্যাটারিচালিত রিকশা ছেড়ে দেয়া ও ব্লু-বুক প্রদানের মাধ্যমে উন্মুক্ত ভাবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের দাবি জানিয়ে বলেন- বিভিন্ন জেলায় অবাধে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করলেও সিসিক কর্তৃক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে রিকশা শ্রমিকরা কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছেন।