রাজধানীর কলাবাগানে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবেরা রহমান লিপি হত্যা রহস্যের কিনারা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিসিটিভি ফুটেজ এবং ওই চিকিৎসকের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ‘ক্ষুদ্র’ আলামত ঘিরে তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ভিকটিমের বাসার কক্ষে পাওয়া গেছে পোড়া সিগারেটের ২টি অবশিষ্টাংশ। এটিকে খুনের মোটিভ উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে দেখছে তদন্তকারীরা। অথচ কক্ষে সিগারেটের ছাই রাখার কোনো অ্যাসট্রে ছিল না। এতে ধারণা করা হচ্ছে ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ওই নারী চিকিৎসক নিজে ধূমপান করতেন না। অন্য কেউ ওই বাসায় ধূমপান করেছিলেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় বিষয়টি ঘটনার অন্যতম আলামত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার দিন সাবেরার বাসায় সাবলেটে থাকা তরুণীর অবস্থান নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ওই তরুণী, তরুণীর বন্ধু, দারোয়ান ও তার ৪ আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো খুনের ক্লু পাওয়া যায়নি। ভিকটিমের ভাড়া বাসায় কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকার কারণে খুনিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের।
ওই বাসার ৬ বাড়ির পরে একটি বাসায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাস্তায় অত্যধিক লোক চলাচলের কারণে ভিকটিমের বাসায় ঘটনার দিন কে গিয়েছিল তা কাউকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। এ ছাড়াও ডা. সাবেরার কক্ষ থেকে কোনো স্বর্ণ বা টাকা চুরি হয়নি। তার আলমারির তালা অক্ষত ছিল। সাবেরার মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে মামলার তদন্তকারীরা। কললিস্ট ধরে চলছে তদন্ত। পাশাপাশি ওই বাসায় এক ব্যক্তির যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। কে ওই ব্যক্তি তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এদিকে, নিহতের ময়নাতদন্ত গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে সাবেরার মরদেহের বুক থেকে নিচের প্রায় ৫০ শতাংশ পোড়া ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার গলার বাম পাশে দু’টি, কানের নিচ ও পিঠের মাঝ বরাবর তিনটি ও কোমরে একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে নাকি পুলিশ মামলা করবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সোমবার দুপুরে কলাবাগানের ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সনোলজিস্ট) চিকিৎসক কাজী সাবেরা রহমান লিপির (৪৭) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ওই বাসায় আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যান। পরে ফায়ারের কর্মীরা সাবেরার শরীরে রক্তাক্ত চিহ্ন দেখে বুঝতে পারেন যে, এটি একটি খুন। পরে পুলিশ গিয়ে ডা. সাবেরার লাশ উদ্ধার করে। খুনের ক্লু উদ্ধারে থানা পুলিশ ছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ মাঠে কাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা খুনের মোটিভ উদ্ধারের জন্য কাজ করছেন। কলাবাগানের ওই বাসায় সাবেরা থাকলেও তার দুই সন্তান নানীর কাছে থাকতো। সাবেরার স্বামীও আলাদা বাসায় থাকতেন।
এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট জোনের এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান, ‘এটি একটি ক্লুলেস খুন। খুনের মোটিভ উদ্ঘাটনে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঠে কাজ করছি। আশা করছি, খুনের মোটিভ দ্রুত উদ্ঘাটিত হবে।’
সূত্র জানায়, গোয়েন্দারা ডা. সাবেরা গ্রীন হাসপাতাল থেকে কখন বের হয়েছিলেন এবং তিনি কী রিকশা না প্রাইভেট গাড়িতে এসেছিলেন তার জন্য তার কর্মস্থল হাসপাতালে গিয়ে তথ্য নিয়ে এসেছে। পরে তারা জানতে পেরেছেন যে, ঘটনার দিন রোববার তিনি রিকশায় করে বাসায় ফিরেছিলেন। হাসপাতালের কোনো সহকর্মীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল কিনা তারা যাচাই করছেন।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত গৃহকর্মীর কাছে পাওয়া তথ্যগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন মামলার তদন্তকারীরা। কারণ ওই গৃহকর্মী তার বাসায় প্রায় ২ বছর ধরে কাজ করেন। এ ছাড়াও তার বাসার সাবলেটে ভাড়া থাকা ওই তরুণীর দেয়া তথ্যও গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে।
নিহতের মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।
তিনি আরও জানান, সাবেরার সঙ্গে বিভিন্ন সময় ফোনে কথা হতো। তবে ওর বাসায় যাওয়া হতো না কখনও। আমরা অবশ্যই দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও তাদের কঠোর বিচারের দাবি জানাচ্ছি।