কবি জন্ম নিয়েছিলেন ওই ঘরটিতে। বেড়ে উঠেছিলেন ওই ঘরটিতেই। ওই ঘরে কবির কত স্মৃতি। সেই স্মৃতি যাতে শেষ হয়ে না যায় সেজন্য কবির বংশধরদের চেষ্টারও কমতি ছিল না। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই ঘরটি তারা অক্ষতই রেখে দিয়েছেন। সংস্কারের জন্য আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। আশ্বাসও পেয়েছেন, কবির স্মৃতি অক্ষত রেখে ঘরটি সংস্কারের। কিন্তু তা মনে হয় আর সম্ভব হচ্ছে না। মুসলিম রেনেসার কবি ফররুখ আহমদের স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরের চারিদিকে ‘লাল দাগ’ পড়ে গেছে। হয়তো ঘরটি ভাঙ্গা পড়বে শিগগিরই। ভেঙ্গে ফেলার জন্য চিহ্ন দেয়া হয়েছে কবির বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলী এবং কবি মাতার কবরের পাশেও। ওসবের ওপর দিয়ে রেললাইন যাবে। এ দিকে ঘরটিসহ কবি স্মৃতি রক্ষার জন্য পরিবারের সদস্যরা আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে।
কবি ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরার শ্রীপুরস্থ মাঝাইলে পৈতৃক বাড়িতে জন্ম নেন। কবি পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলীর বাড়ি ওটি। এখানেই তার পূর্বপুরুষদের আদিবাস। কাঠ ও টিন দিয়ে নির্মিত সেই ঘরে কবির অনেক স্মৃতি। কবি ও তার পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরটির আশপাশে গত শুক্রবার লাল দাগ দিয়ে গেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাড়ির ওপর দিয়ে রেললাইন যাবে। এই রেললাইনটি ফরিদপুরে মধুখালী-কামারখালী হয়ে মধুমতি নদীর ওপর দিয়ে মাগুরা পর্যন্ত যাবে।
কবির ভাতিজী সৈয়দা দিলরুবা গত ২৬ মে মাগুরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মাগুরা জেলায় রেললাইন স্থাপন ও কয়েক জায়গায় রেলস্টেশন নির্মাণের জন্য সরকার কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
সম্প্রতি কবি ফররুখ আহমদের বসতবাড়ির ওপর রেললাইন সংযোগের জন্য সরকার কর্তৃক মাপজোখ করা হয়েছে। ফররুখ আহমদের বাড়িতে তার জন্মঘর, পাঠাগার, গোলঘর, কবির পিতা-মাতার কবরসহ পরিবারের অন্যদের কবর রয়েছে। এ ছাড়া অনেক স্থাপনা নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু দর্শনার্থী কবি ফররুখ আহমদের বাড়ি দেখতে আসেন। তাই কবির বাড়ি ও জায়গা জমি সুরক্ষা করা একান্ত আবশ্যক হয়েছে। অন্যথায় কবি ফররুখ আহমদের পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ভূমিহীন হয়ে পড়বে। সেই সাথে কবির বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
কবির ভাতিজা এবং কবি ফররুখ পাঠাগারের সভাপতি সৈয়দ রিপন আহমেদ জানান, রেললাইনটি তাদের বাড়ির ওপর দিয়ে না গিয়ে অন্যস্থান দিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। প্রথমে যে স্থানটি দিয়ে রেললাইন যাওয়ার কথা ছিল সেটি ছিল উত্তম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দিক পরিবর্তন হয়ে এখন কবির বসতবাড়ির ওপর দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে কথা বলেছেন। রেলওয়ের ওই প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হকের সাথেও যোগাযোগ করেছেন কথা বলেছেন। প্রকল্প পরিচালক কবি পরিবারকে বলেছেন, রেললাইনটি ওই বাড়ির ওপর দিয়ে যাবে ঠিকই কিন্তু বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে নেয়া হবে। রিপন বলেছেন, ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গেলেও তাতে কবির বসতবাড়িটি আর আগের মতো থাকবে না। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে বলে তাদের আশঙ্কা।
এ দিকে মাগুরার রেলওয়ের ওই প্রকল্পের পরিচালক আসাদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, কবির বাড়ির ওপর দিয়ে নয়, বাড়ির পাশ দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে। আর তা ফ্লাইওভার করে নেয়া হচ্ছে। এতে বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, বাড়ির যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্যই ফ্লাইওভার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাগুরার এডিসি মো: আফাজ উদ্দিন বলেছেন, ওই প্রকল্পের পরিচালকের সাথে জেলা প্রশাসনের কথা হয়েছে। বাড়ির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ওই বাড়িতে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভার করে নেয়া হলে কবির বসতঘরের কোনোই ক্ষতি হবে না।