চট্টগ্রাম: দেশীয় উৎপাদনের পরিমাণ ১৮ লাখ টন পেঁয়াজ। সারা বছরের মোট চাহিদা ২২ লাখ টন। ঘাটতি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয় অবশিষ্ট ৪ লাখ টন। এই ৪ লাখ টন পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেন। কখনো সরবরাহ সংকটের অজুহাতে, আবার কখনো আমদানি অনুমতি (আইপি) বন্ধ করার দোহাই দিয়ে হুট করে বাড়িয়ে দেন পণ্যটির দাম। এবারও ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আইপি বন্ধের অজুহাতে পণ্যটির দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বাড়িয়েছেন।
ভোক্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের অজুহাতগুলো ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। তাহলে পণ্যটির দাম গেল বছরের মতো আকাশচুম্বী হবে না।
জানা যায়, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি ৪ লাখ টন।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির যে অনুমতি ছিল, তার মেয়াদ গত ২৯ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পাওয়া যায়নি। অনেক আমদানিকার আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত অনুমতি পাননি। ভারতীয় পেঁয়াজ যতক্ষণ আমদানি হচ্ছে না ততক্ষণ দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। সরকার যদি নতুন করে আইপি অনুমোদন না দেয়, তবে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে গিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৩৮ টাকায়। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪১ টাকা কেজি। একই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার ও সোলাইমান আলম স্টোরের মালিক আলী আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ব্যবসায়ীদের হাতে যেসব আইপি ছিল সবগুলোর পণ্যই চলে এসেছে। ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বর্তমানে বন্ধ আছে। তবে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের বিকল্প দেশ মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি আরও বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় উধাও বাজার থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ। ফলে খানিকটা চাপ পড়েছে দেশীয় পেঁয়াজের ওপর। তাই দাম বাড়তি।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজ দিয়ে সারাদেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। মূলত সরকার নতুন করে পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি ইস্যু না করার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে না। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশের আমদানিকারকরা মিয়ানমারের পেঁয়াজ আনছেন। এরপরও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না পেলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এখনো দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এখন আইপি বন্ধের অজুহাতে পণ্যটির দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। এরপরও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হোক। কারণ এখন থেকে বাজার তরদারকি না করলে গত বছরের মতো আগামীতে পেঁয়াজের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।