ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার রায়ে ৫ জনকে ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। মামলার ১৩ আসামির মধ্যে বাকি ২ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
রোববার (৮ ফেব্রুয়ারি) জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হচ্ছেন খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, মো. রাশেদুল ইসলাম রাজু, খান মো. রইছ ওরফে সোহান, জাহিদ হাসান এবং মাহবুব আকরাম। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হচ্ছেন ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ, নাজমুস সাকিব তপু, মাজহারুল ইসলাম, কামরুজ্জামান সোহাগ, শফিউল আলম সেতু এবং অভিনন্দন কুণ্ডু অভি। তাদেরকে কারাদণ্ডের অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন মো. নাজমুল হুসেইন প্লাবন ও মো. মাহমুদুল হাসান মাসুদ।
জাবির ইংরেজি ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পর রায় ঘোষণা করা হলো। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মদিনাবাগ নাবলাপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম তোফায়েল আহমেদ, মাতার নাম হাসিনা আহমেদ।
দণ্ডপ্রাপ্তরাও সবাই জাবির বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
১৩ আসামির মধ্যে ৭ জন কারাগারে আটক আছেন। বাকি ৬ জন পলাতক।
কারাগারে আটক ৭ আসামির সবাই জামিনে ছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি মামলার বিচারিক কার্যক্রমের শেষ দিনে তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। তাদেরকে রোববার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের ফের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার কাঠগড়া থেকে চার আসামি খন্দকার আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মো. রইছ, ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ ও মাহবুব আকরাম পালিয়ে যান। তাদের ছাড়াই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি বিকেলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ ৪র্থ বর্ষ অনার্স পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ওইদিন রাতেই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোরে মারা যান জুবায়ের।
জুবায়ের হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) হামিদুর রহমান বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মীর শাহীন শাহ পারভেজ ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব তপু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণার আগে চার্জশিটভূক্ত ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।