ঢাকাঃ অবিলম্বে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া এবং পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেয়ার প্রতিবাদে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। রোববার রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ আইএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। সংবাদ সম্মেলনে দেশ এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তিনি।
অবিলম্বে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ২রা জুন মানববন্ধন করবে তারা। এছাড়া ৩রা জুন দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন করবে। পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেয়ার প্রতিবাদ ও তা সংযোজনের দাবিতে ৫ জুন শনিবার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে চার প্রস্তাব
ফিলিস্তিন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম প্রসঙ্গে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা ও অবৈধ ইসরাইলের বর্বরতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ইতিহাস ও ঘটনার ধারাক্রম সবারই জানা। ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অবস্থান সাধুবাদযোগ্য। আমরা বাংলাদেশের অতীত অবস্থানকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাংলাদেশের জন মানুষের আবেগ অনুভূতিকে আমলে নিয়ে জনতার পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তাব করছি যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বর্বরতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করতে হবে। আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ইসরাইলের নিন্দা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সরব ভূমিকা পালন করেন। আমরা আশা করবো, আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে স্বাধীন সার্বভৌম একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্যও তিনি সরব ভূমিকা পালন করবেন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্তকরণ কল্পে বহুজাতিক মুসলিম সেনাবাহিনী গঠনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে যখন গোটা বিশ্বের মানুষ সোচ্চার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতেও যখন প্রথাগত ইসরাইলি পক্ষপাতের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জোড়ালো প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে, তখন বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ৫০ বছরের ঐতিহ্য ছুড়ে ফেলে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দদ্বয় বাদ দেয়া হয়েছে। এই সংবাদে আমরা বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা আরো হতাশ হয়েছি এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতা দেখে। পাসপোর্ট থেকে এই শব্দ দুটি বাদ দেয়া কার্যত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই গোপন একক সিদ্ধান্ত ও অযৌক্তিক উপস্থাপনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি আকার ধারণ করার পরে প্রায় দুই বছর হতে চললো। টিকা আবিষ্কার ও গণ-টিকাদান প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে প্রায় অর্ধ বছর হতে চললো। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে টিকা প্রাপ্তি ও বিতরণ প্রক্রিয়া ভুল সিদ্ধান্ত, অদক্ষতা ও নৈরাজ্যের কবলে পড়ে অনিশ্চিত হয়ে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার রাশিয়া ও চীনের থেকে টিকা সংগ্রহ করা নিয়েও টালবাহানা করেছে। টিকা আবিষ্কারের পরে এবং বাংলাদেশে একদফা টিকা বিতরণের পরেও দেশকে ২য় দফা শক্ত লকডাউনে যেতে হলো। এমন পরিস্থিতিতে টিকা সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতলববাজি সময়ক্ষেপণ, সিদ্ধান্তহীনতা এবং তারপরেও তারা বহাল তবিয়তে থাকা আমাদেরকে হতবাক করে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অশুভ শক্তি কি স্বয়ং সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী?
অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সবকিছুতেই বিপর্যয় নেমে এসেছে। সরকার ধাপে ধাপে সবকিছু খুলে দিলেও খোলেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সবারই প্রত্যাশা স্বাস্থ্য সতর্কতা নিশ্চিত করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। অন্যথায় সরকারের অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীগণকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
ওলামা ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধান ও সরকারের দাবী মতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের সমালোচনা, আন্দোলন, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, উত্তপ্ত বক্তব্য অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। গণতন্ত্রের এই চিরাচরিত নিয়ম সহিংসতায় রূপ নেয় কেবল মাত্র সরকারের আচরণের ভিত্তিতে। তার জের ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করে। সরকারের ফ্যাসিবাদী এই চরিত্রের সর্বশেষ শিকার ওলামায়ে কেরাম। নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রেক্ষিতে জনমনের ক্ষোভ প্রকাশ ও তাতে সরকারের দমন-পীড়নমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে পবিত্র রমজানে যেভাবে ওলামায়ে কেরামকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাতে এ দেশের মুসলমানদেরকে ১৮৫৭ এর সিপাহী বিপ্লবোত্তর ওলামাদের সাথে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের আচরণের কথাকে মনে করিয়ে দেয়। সবাইকে মনে রাখা উচিত, ইতিহাসও সাক্ষী যে, উলামায়ে কেরাম সবচেয়ে শান্ত ও নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপন করেন। সেই ওলামায়ে কেরামকে ঠুনকো অজুহাতের ভিত্তিতে মামলা দিয়ে জর্জরিত করা এবং গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার ফলে জনমনে এই সরকার ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।
বাজেট প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, এবারের অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হবে আগামী ১৩ই জুন। বাজেট হলো একটি দেশের আগামী একবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য জনমানুষের দেয়া টাকা খরচের পরিকল্পনা। এখানে আশা করা বাঞ্ছনীয় যে, বাজেট প্রণয়নের আগে জনমানুষের সাথে আলাপ করা হবে। আদতে তা হয় না। অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে আলাপ করে, সমাজ ও বাস্তবতা বিমুখ আমলাদের দিয়ে বাজেট তৈরি করে। ফলে আমাদের বাজেটের কলেবর বাড়ে, কথার ফুলঝুরি উপচে পড়ে, কিন্তু কাজের কাজ কমই হয়। বাজেট নিয়ে আমাদের মৌলিক কিছু দাবি হলো-
১. বাজেট উপস্থাপনের আগে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করতে হবে।
২. কল্পনাবিলাস বাদ দিয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের সক্ষমতা পরিমাপ করে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া। আমরা জানি গত অর্থবছরে চিকিৎসা গবেষণায় টাকা রাখা হলেও তার কোন টাকা ব্যবহার হয় নাই। তারপরেও এবছর আবারো চিকিৎসা গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এমন উদাহরণ আরো অনেক দেয়া যাবে। সক্ষমতাহীন এমন বরাদ্দ দুর্নীতির রাস্তা খুলে দেয়।
৩. ঋণ ও অনুদান নির্ভর বাজেট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের কোনো দেশের পক্ষে ঋণ ও অনুদান নির্ভর বাজেট শোভা পায় না।