জাতীয় সংসদের শূন্য আসনের আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো ভাবনা নেই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মাঝে। ভোটের পরিবেশ না ফিরলে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে দলটিতে। জাতীয় সংসদের ৪টি শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশন গত বুধবার বৈঠকে বসে। আসন্ন উপনির্বাচন বিষয়ে বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েক সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যানসহ একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের সময়কে বলেন, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তেই আছে বিএনপি। অর্থাৎ শূন্য ঘোষিত চার আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। এই অবস্থায় আজ শনিবার দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসছে। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কী মতামত দেন তা দেখতে হবে।
স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য বলেন, জাতীয় সংসদের শূন্য আসনের উপনির্বাচন নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ প্রতিবেশী ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি যেদিকে গেছে, তাতে বাংলাদেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশই নেই। আমরা তো দলীয় নেতাকর্মীদের করোনা সংক্রমণের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। এর পরও এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে- এ নিশ্চয়তাও নেই।
গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, উপনির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেবে না- এই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বহাল আছে। তা পরিবর্তন করতে হলে বিষয়টি স্থায়ী কমিটিতে আবার আলোচনা হতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের কমিশনে পরিণত হয়েছে। এই কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না- তা প্রমাণিত। বিগত নির্বাচন নিয়ে কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কথাই যথেষ্ট। জনগণ বলে, আমরা ভোট দিতে পারি না, সেক্ষেত্রে শতভাগ ভোট কে দেয়? এ কারণে দেশের মানুষও আর চায় না-বিএনপি এ ধরনের নির্বাচনে যাক।
গতকাল বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরিবেশ না ফিরলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ নেব না। এখন পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আগে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল সেটি এখনো আছে। নতুন কোনো আলোচনা হয়নি।
স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, ১১ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু কয়েকটি উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেখার পর মার্চে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আর কোনো ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
এ আসনে নির্বাচন ২১ জুলাইয়ের মধ্যে করতে হবে। এ ছাড়া সিলেট-৩ ঢাকা-১৪ ও কুমিল্লা-৫ আসনও মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় জুলাইয়ের মধ্যে উপনির্বাচন করতে হবে। যদিও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন কশিনের এই উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে সরকার হঠাৎ করে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে এ বিষয়ে দল পাল্টা কৌশল নির্ধারণ করবে বলে জানায় একটি সূত্র। দলের এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এখন নির্বাচন দিলে সরকারের সুবিধা হতে পারে, এ কারণে হয়তো উদ্যোগ নিচ্ছে; কিন্তু এখন এ নির্বাচন করার কোনো অর্থই নেই। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কী ভাবছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তারা এ বিষয়টি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করছেন না। হয়তো দলের উচ্চপর্যায় পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।