রাজধানীতে ৭ বছরের ছেলের সামনে বাবার মাথা বিচ্ছিন্ন করল সন্ত্রাসীরা

Slider টপ নিউজ

রাজধানীর পল্লবীতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ৭ বছরের ছেলের সামনে প্রকাশ্যে তার বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম মো. শাহিনউদ্দিন (৩৪)। রোববার বিকেলে পল্লবীর ১২ নম্বর ডি-ব্লকে ৩১ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন ও তার বাহিনী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগেও সুমনের বাহিনী শাহিনউদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় ওই সময় পল্লবী থানায় সুমন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এ ছাড়া গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সুমন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজীসহ অন্তত চারটি মামলা হয়েছে পল্লবী থানায়।

ব্যাটারিচালিত রিকশার টোকেন বাণিজ্য, মাদক ও জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে সুমন বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় সুমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা ওঠেন বেপরোয়া।

পুলিশের ধারণা, জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে অভিযুক্ত সুমন পলাতক রয়েছেন। তবে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাতে অভিযুক্ত সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী নিহত শাহিনউদ্দিনের ৭ বছরের ছেলে মাশরাফি ও তার স্বজনরা জানায়, পল্লবীর ১২ নম্বর সিরামিক রোডে সপরিবারে থাকতেন শাহিনউদ্দিন। রোববার বিকেলে বাসা থেকে ছেলে মাশরাফিকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বের হন শাহিনউদ্দিন। বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে সুমন নামের এক যুবক মোবাইল ফোনে কল দিয়ে শাহিনউদ্দিনকে পল্লবীর ১২ নম্বর ডি-ব্লক ৩১ নম্বর রোডে দেখা করার জন্য আসতে বলেন।

সেখানে পৌঁছালে মাশরাফিকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে তার বাবার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ায় সুমন। একপর্যায়ে মাশরাফির চোখের সামনেই তার বাবাকে লাথি মেরে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয় সুমনসহ আরও ৬ থেকে ৭ জন। এরপর তারা শাহিনউদ্দিনকে মাটিতে ফেলে বড় বড় ছুরি (চাপাতি, রামদা) দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। একজন বড় একটি পাথর ছুঁড়ে মারে তার বাবার ওপর। বাঁচার জন্য শাহিনউদ্দিন পাশের একটি বাড়ির গ্যারেজে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা সেখানে ঢুকেও তাকে কোপায়। এ সময় ধর থেকে তার বাবার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পুলিশ সূত্র জানায়, স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সুমন গ্রুপের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার নিয়ে শাহিনউদ্দিনের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ ছাড়া সরকারি জমি দখল নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় পল্লবী থানায় উভয়ের নামেই একাধিক মামলা রয়েছে। চলমান বিরোধের জেরে রোববার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে শাহিনউদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন পলাতক খুনীদের গ্রেপ্তার করলেই ঘটনার আদ্যপান্ত পরিস্কার হওয়া যাবে।

পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শাহিনউদ্দিন নামের ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যার পেছনে সম্ভাব্য সব বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *