ঢাকা: জামায়াতের রূপরেখায় চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি সরাসরি পরিচালনা করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও তার পুত্র তারেক রহমান।
গোয়েন্দা সংস্থার একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জামায়াত এ রূপরেখা তৈরির পর খালেদা-তারেককে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে। এরপর মা-ছেলের নির্দেশনায় তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাচ্ছেন না দলের স্থায়ী কমিটি কিংবা ২০ দলীয় জোটের নেতারা। তাই নিজের পুত্রের নির্দেশেই খালেদা জিয়া সাম্প্রতিক অবরোধসহ সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিসহ নানা দাবিতে আন্দোলনরত জামায়াত নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করেছে। নিজেদের মধ্যে ইন্টারনেটে ফোন করার অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন খালেদা-তারেক ও জামায়াত নেতারা।
তবে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বাড়ির টেলিফোন, ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। বসানো হয়েছে নেটওয়ার্ক জ্যামার। এতে খালেদা-তারেকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ যায়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সংযোগ বিচ্ছিন্নের কয়েকদিনের মধ্যেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের ৬ হাজার নেতাকে নতুন মোবাইল সিম কার্ড কেনার নির্দেশ দেন তারেক রহমান। চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন তিনি।
তার নির্দেশ অনুযায়ীই কর্মীদের আন্দোলনের নির্দেশনা দিচ্ছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা।
সম্প্রতি দু’দিনের জন্য ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ট্যাঙ্গোসহ এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এর আগে দেশীয় অপারেটরে যোগাযোগ করায় ৫ জানুয়ারির ‘সম্ভাব্য নাশকতার’ তথ্য আগেভাগেই জেনে যায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এবারের পদক্ষেপ যাতে না ফাঁস হয় সেজন্যই এসব অ্যাপ্লিকেশনে যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তাই সরকার এগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এদিকে নাটোর জেলা বিএনপির একজন নেতাসহ একাধিক নেতা আন্দোলন নিয়ে তারেক-খালেদার পরামর্শের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে নিজেদের সঙ্গে তারেকের যোগাযোগের বিষয়টি প্রসঙ্গে কেউ মুখ খোলেননি। কয়েকজন আবার সরাসরি বিষয়টি অস্বীকার করছেন।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপির অধিকাংশ জেলা পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ। নিজেদের অন্য অপারেটরের নম্বরটি দিয়ে ভাইবার-হোয়াটস অ্যাপে আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
আন্দোলনে তারেকের সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমার ‘ধারণা নেই’। আমরা সকলে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছি, চেয়ারপার্সনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
‘চলমান আন্দোলন জামায়াতের রূপরেখায় হচ্ছে’ কথাটি ‘সঠিক নয়’ বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য। তিনি বলেন, ‘রূপরেখা জামায়াতের না হলেও দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে জামায়াত ২০ দলের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত নেতাদের বিচার একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা সব সময় এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলাম, এখনো আছি। তবে চলমান আন্দোলন বিচার ঠেকানোর আন্দোলন নয়। জামায়াতের আন্দোলন দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার। ১৯৯৬ সালের আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে জামায়াত’।