পশ্চিমবঙ্গের মসনদে তৃতীয়বারের মতো বসেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বুধবারই তিনি শপথ নিয়েছেন। আর গতকাল সোমবার শপথ নিয়েছে তার মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভায় তৃণমূলের মুসলমান নেতা ও নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে তাদের সংখ্যা বেড়েছে। এবার টানটান উত্তেজনাপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মুসলিম ও নারী ভোটাররা। এই বিবেচনায় হয়তো মন্ত্রিসভায় সেই প্রতিফলন দেখা গেল।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়- নতুন মন্ত্রিসভা মুখ্যমন্ত্রীসহ নারী মন্ত্রীর সংখ্যা ৯ জন। অন্যদিকে তিনমন্ত্রী মন্ত্রী ও তিনজন প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ৬ জন মুসলিম রয়েছেন তার মন্ত্রিসভায়। মন্ত্রিসভার নারী সদস্যরা হলেন- মমতা ব্যানার্জি, শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রত্না দে নাগ, সন্ধ্যা রাণী টুডু, শিউলি সাহা, সবিনা ইয়াসমিন, বীরবাহা হাঁসদা এবং জ্যোৎস্না মান্ডি। মুসলিম হিসেবে মন্ত্রিসভায়
দায়িত্ব পেয়েছেন- ফিরহাদ হাকিম, গোলাম রব্বানি, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, হুমায়ুন কবীর, আক্রুজ্জমান, সবিনা ইয়াসমিন। এছাড়া সাবেক ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারিও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এ দিকে পাঁচ বছর পর বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন হলেও, মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি মদন মিত্রের। ২০০৯ সালের বিষ্ণুপুর পশ্চিম (ডিলিমিটেশনের কারণে লুপ্ত) বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতে প্রথমবার বিধায়ক হন মদন। কিন্তু ২০১১ সালেই তাকে প্রার্থী করা হয় প্রভাবশালী সিপিএম নেতা কামারহাটির বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে জিতলে তিনি পান স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। খবরে এমনও শিরোনাম হয়েছে, ‘মন্ত্রীত্ব না পেয়ে মন খারাপ মদনের’।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে মন্ত্রিসভার ৪৩ জন মন্ত্রী শপথ নেন। এছাড়াও অমিত মিত্র, ব্রাত্য বসু বাড়ি থেকে ভার্চুয়ালি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
গতকাল সোমবার সব মিলিয়ে ৪৩ জন মন্ত্রী রাজভবনে শপথ নেন। সাধারণত একজন একজন করে মন্ত্রী রাজ্যপালের সামনে যান এবং শপথবাক্য পাঠ করেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট মানুষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জনগণও শপথ দেখতে পারেন। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে এসবের কিছুই হয়নি। সকাল সাড়ে ১০টায় মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। তার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন মন্ত্রীরা। তিন দফায় শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল।
প্রথমে পূর্ণ মন্ত্রী, তারপর স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং সব শেষে প্রতিমন্ত্রীরা একসঙ্গে শপথবাক্য পাঠ করেন। করোনার কারণে আলাদা আলাদা করে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়নি। শারীরিক কারণে নির্বাচনে লড়েননি অমিত মিত্র। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমো তাকে ফের মন্ত্রিত্ব দিচ্ছেন। ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচনে তাকে জিতে আসতে হবে।
শপথের পরপরই নবান্নে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, রাজ্যে এখনই সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করা হবে না। তবে আংশিক লকডাউনের যে নিয়মগুলো জারি করা হয়েছে তা বহাল থাকবে। তবে জনগণকে লকডাউনের মতোই আচরণ করতে হবে। অকারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীকে বিরোধী নেতা করেছে বিজেপি। তিনি এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামে হারিয়েছেন। একসময় মমতার ডানহাত বলে পরিচিত এবার বিধানসভায় বিজেপির নেতৃত্ব দেবেন।