রিপন আনসারী: গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিগত সকল মেয়রদের চেয়ে নিঃসন্দেহে তিনি বেশী উন্নয়ন করেছেন। গাজীপুর মহানগরের চেহারা পাল্টে দিচ্ছেন তিনি। শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ অসংখ্য উন্নয়ন তিনি করছেন রাতদিন পরিশ্রম করে। নগরবাসীর কাছে তিনি একজন পরিক্ষিত সেবক। এতে কোন সন্দেহে নেই। তবে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে মুখরোচক সমালোচনা রয়েছে। তোষামোদীদের ভীড়ে ও ভয়ে সাধারণ মানুষ মেয়রকে যে সব কথা বলতে পারেন না, সেসব নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
আলহাজ এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার আশপাশে বেশ কিছু মানুষ অটো ভীড়ে গেছে। রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও সব সময় সরকারী দলের কথিত কিছু সাংবাদিক তাকে ঘিরে ফেলেছেন। কৌশলে মেয়রকে ২৪ ঘন্টা ওয়াচে রেখে গোপনে ভবিষৎতের জন্য তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা। তোষামোদ করে নানা ধরণের সুবিধা আদায় করছেন ওই সকল সুবিধাভোগীরা। এদের মধ্যে আওয়ামীলীগের লোক অনেক কম। সুবিধাভোগীদৈর মধ্যে কিছু সাংবাদিক, কিছু বহিরাগত ও কিছু তোষামোদকারী লোক হঠাৎ কোটিপতি হয়ে গেছেন। আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হওয়া ওই সকল ব্যাক্তিদের অর্থসম্পদ বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় আলোচনা সমালোচনার খোরাক। মেয়রের আশপাশে থাকা ওই সকল সুবিধাভোগীরা কি ভাবে হঠাৎ কোটিপতি হলো, কি কাজ করে, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলমান। হঠাৎ বড়লোক হওয়া ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে বহুতল ভবন, বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি প্রদর্শন করে ফেসবুকেও রসালো পোষ্ট দিচ্ছেন। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সমালোচনা বিদ্যমান। তবে সরকারী লোকজনও এসব সম্পদের খোঁজখবর নিচ্ছেন না, এমন নয়। তারাও মাঝে মাঝে অনুসন্ধান করছেন।
এদিকে গাজীপুর মহানগরে রাস্তাঘাটের যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা অতীতের সকল রেকর্ডভঙ্গ করেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে কিছু সাধারণ দাবী পূরণ না হওয়ায়। যেমন যাদের জায়গা জমি ও স্থাপনা রাস্তায় চলে গেছে, তারা তেমনভাবে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেয়রের কাছে থাকা কিছু লোক, ক্ষতগ্রস্থদের দিয়ে দরখাস্ত করিয়ে কিছু টাকা নেয়। সেটার কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থরা পায়, তা নিয়েও সমালোচনা আছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ক্ষগ্রিস্থদের দরখাস্তে সুপারিশ করতেও অনীহা অনীহা ভাব দেখায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থরা বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন।
রাস্তায় ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কয়েকজন বলেছেন, ক্ষতিপূরণের আবেদন করা যায় না। আর্থিক সহযোগিতার কথা বলতে হয়। মেয়র সাহেবের বাসা বা অফিসে গেলে মানুষের ভীড়ে দেখা করতে সময় লাগে অনেকদিন। যদিও দেখা করা যায়, তবুও যারা ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিতে বলেন, তারাই মেয়রের আশপাশে সব সময় বসে থাকেন। ফলে মেয়রের সাথে দেখা না করে আশপাশের লোকজনের সাথেই কথা বলতে হয়। ক্ষতিপূরণ পেতে বিভিন্ন বিড়ম্বনার কারণে রাস্তায় জায়গা জমির ক্ষতিপূরণের জন্য রাজপথে মানববন্ধন করতেও দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্থদের দাবী, তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা ভূমি অধিগ্রহন অফিসের মাধ্যমে দেয়া হউক।
এদিকে গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সাথে নগরবাসীর দেখা সাক্ষাৎ নিয়ে নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে। তবে সিন্ডিকেট সাংবাদিক, সিন্ডিকেট নেতা, সিন্ডিকেট সুবিধাভোগী লোকজন সব সময় মেয়রকে ঘিরে রাখার কারণে নগরবাসী তাদের নগর পিতার সাথে ভালোবাসার কথা, সুখ ও দুঃখের কথা একান্তে বলতে পারেন না বলে অভিযোগ অহরহ।
সাধারণ মানুষ মনে করে, নগর পিতাকে সন্তানদের জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। সন্তানেরা যেন তাদের মনের কথা পিতাকে একান্তে বলতে পারেন, সে সময় তৈরী করতে হবে। কোন মাধ্যমে পিতার সাথে সন্তান কথা বলতে থাকলে সংসারে অশান্তি হয়ে সন্তান বেয়াদব হয়ে যায়, এটাও মনে রাখতে হবে। দিনের পর দিন ঘুরে দেখা করতে না পারার সম্ভাবনা যেন তৈরী না হয়, খেয়াল রাখা উচিত। পাশাপাশি, হঠাৎ কোটিপতি হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে না পারলে এক সময় মেয়র নিজেই প্রশ্নববিদ্ধ হয়ে যাবেন, এমন আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
মানুষ আশা করে, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ব্যতিক্রমী দেশ প্রেমিক হয়ে উঠুক। ভালো কাজগুলো যেন অভিশাপে নষ্ট হয়ে না যায়, বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। জনপ্রিয়তা কচুপাতার পানির মত তৈরী ও ধ্বংস হয়, এমন প্রমান অসংখ্য। বাতাসে বা কচু গাছের দ্বারা যেন পানি না পড়ে, সে বিষয়ে নজর রাখতে না পারলে আজকের দিন আগামীর জন্য বিপদজনক হবে না, এমন বলা মুশকিল।