পর পর দু’দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির পর আসছে এক সপ্তাহের খরা। এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও সাথে বৃষ্টি হচ্ছে। এ ঝড় আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা আগামী ৮ মে থেকে কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়ার বিভিন্ন প্যারামিটার ও আবহাওয়া বিষয়ক কয়েকটি স্যাটেলাইটের চিত্র বিশ্লেষণ করে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানান, অভ্যন্তরীণ আবহাওয়া, বঙ্গোপসাগর ও পার্শ্ববর্তী আবহাওয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। সাধারণত মে মাসে বঙ্গোপসাগর অথবা পার্শ্ববর্তী আন্দামান সাগরে লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে। মে মাসে অতীতে বড় ধরনের ঝড়ের ইতিহাস রয়েছে। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা এ মাসে আঘাত হানে বাংলাদেশ ও ভারতে।
মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, চলতি মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ দেখা যাচ্ছে না। আগামী ১৩ থেকে ১৪ মে আন্দামান সাগরে নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে কিন্তু তা চলে যাবে থাইল্যান্ড উপকূলে। এ ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান সাগরের কাছে লঘুচাপ থেকে সৃষ্টি হতে পারে ৮ থেকে ১০ মে’র মধ্যে। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগর অথবা ভারতের উড়িষ্যা অথবা অন্ধ্র উপকূলে পানির তাপমাত্রা নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মতো অবস্থা নেই। তিনি বলেন, উপকূলের কাছাকাছি পূর্ব বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার উপকূলে পানির তাপমাত্রা বেশি থাকলেও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অথবা আন্দামানের কাছাকাছি যে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেখানে পানির তাপমাত্রা কম। এখনকার এই তাপমাত্রায় নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় হয় না। সাগরে পানির তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে গেলে ঝড়ের একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে।
মোস্তাফা কামাল জানান, বর্তমানে ঝড় হওয়ার মতো বঙ্গোপসাগর ও আন্দামানে ৫০ থেকে ৬০ কিলো/জুল সম্ভাব্য পরিবেশ রয়েছে কিন্তু গত বছর মে মাসে ঝড়ের সম্ভাব্য পরিবেশ ছিল ১২০ থেকে ১৫০ কিলো/জুল। ফলে আগামী ২০ মে’র মধ্যে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে গত বছর ১৬ মে থেকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের সৃষ্টি হয় এবং প্রবল শক্তি নিয়ে ২১ মে’ উপকূলে আঘাত হানে।
মোস্তাফা কামাল জানান, অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাটির আর্দ্রতা একেবারেই কম। আর্দ্রতা বেশি হলে নিকট আকাশে ভাসমান মেঘের ওপর প্রভাব ফেলে এবং বৃষ্টিপাত হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। বৃষ্টিপাতের জন্য মাটির আর্দ্রতা ৪০ শতাংশ ভূমিকা রাখে বলে এই আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জানান। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে শুষ্কতা বিরাজ করায় মাটি বেশ শুষ্ক। ফলে মাটির আর্দ্রতা বেশ কম। গত বছর মে মাসে মাটি থেকে বাতাসের আর্দ্রতা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জোগান দিয়েছিল।
কালবৈশাখী সম্পর্কে তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অথবা কিছুটা আগে অথবা পরে ঢাকা বিভাগে, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে কালবৈশাখী ঝড় এবং সাথে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। খুলনা বিভাগে দুপুরের দিকে বেশ ভালো বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আরেক হাওয়া যশোর থেকে প্রবেশ করে শেষ পর্যন্ত ফরিদপুর-মাদারীপুর পর্যন্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া রংপুর বিভাগের সবগুলো জেলায় ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে খণ্ডখণ্ডভাবে বৃষ্টিপাত হবে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে। সিলেট বিভাগে সকালের দিকে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মোস্তাফা কামাল।