ফাইল ছবিকরোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বে প্রতি দু’জন মানুষের মধ্যে একজনের আয় কমে গেছে। বাংলাদেশসহ ৫৭টি দেশের শতকরা কমপক্ষে ৬৫ ভাগ মানুষ এ সময়ে কাজ হারিয়েছেন। কাজ হারানো এবং কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ার কারণে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব কথা বলা হয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপকারী প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ। তারা বিশ্বের ১১৭টি দেশের কমপক্ষে তিন লাখ মানুষের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল সোমবার। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকেরই আয় কমে গেছে।
এর ওপর ভিত্তি করে বলা হয়, বিশ্বে এমন মানুষের সংখ্যা ১৬০ কোটি। গ্যালাপের বিবৃতিতে গবেষকরা বলেছেন, বিশ্বজুড়ে এই আয় হারানো সর্বোচ্চ হার শতকরা ৭৬ ভাগই থাইল্যান্ডে। অন্যদিকে সর্বনিম্ন হার সুইজারল্যান্ডে শতকরা ১০ ভাগ। বলিভিয়া, মিয়ানমার, কেনিয়া, উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, হন্ডুরাস এবং ইকুয়েডরের যেসব মানুষ জরিপে অংশ নিয়েছেন তার মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৭০ ভাগ বলেছেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির আগে যে পরিমাণ অর্থ তারা বাসায় নিতেন তার চেয়ে এখন অনেক কম আয় হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এই আয় কমে গেছে শতকরা ৩৪ ভাগ। উল্লেখ্য, করোনা মহামারি সারাবিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে আঘাত করেছে। বিশেষ করে নারীরা তার মধ্যে অন্যতম। নারীদেরকে খুচরা বিক্রেতা, পর্যটন এবং খাদ্য বিষয়ক সার্ভিসে কম বেতনে নিয়োগ করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই করোনা মহামারিতে বিশ্বে নারীরা মোট প্রায় ৮০,০০০ কোটি ডলার কম আয় করেছেন। অন্যদিকে গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বলেছেন, চাকরি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে অস্থায়ীভাবে কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এই হারে বিশ্বে এমন কর্মহীন হয়েছেন ১৭০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। অন্যদিকে ভারত, জিম্বাবুয়ে, ফিলিপাইন, কেনিয়া, এল সালভাদরের কাতারে চলে এসেছে বাংলাদেশ। এসব দেশসহ মোট ৫৭টি দেশ থেকে জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৬৫ ভাগ বলেছেন, কাজ থেকে বিরত রয়েছেন তারা।
তবে যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে কম পরিমাণ মানুষ বলেছেন যে, তাদেরকে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে প্রধানত উন্নত ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো। এমন দেশের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানি। এসব দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন কম আয় করেছেন অথবা কাজ থেকে অস্থায়ীভিত্তিতে বিরত রয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে এই হার শতকরা ৩৯ ভাগ। জরিপে আরো দেখা গেছে, করোনা মহামারির কারণে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মানুষ হয়তো চাকরি হারিয়েছেন, না হয় ব্যবসা হারিয়েছেন। এই হারে বিশ্বে এই ক্যাটাগরিতে পড়েন মোট কমপক্ষে ১০০ কোটি মানুষ। ফিলিপাইন, কেনিয়া এবং জিম্বাবুয়ের মতো নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এসব অঙ্কে ভিন্নতা রয়েছে। এসব দেশের শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ মানুষ বলেছেন, তারা হয়তো চাকরি বা ব্যবসা হারিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডে এই হার ৩ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ১৩ ভাগ।