ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ চার রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে নির্বাচনের ফল ঘোষণা হবে রোববার। বুথফেরত জরিপে পশ্চিমবঙ্গে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া আসামে বিজেপি, কেরালায় বামফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন জোট, তামিলনাড়ুতে বিরোধী দল ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোট এবং পদুচেরিতে অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেস (এআইএনআরসি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয়ের কথা বলা হচ্ছে।
বুথফেরত জরিপের ফল ঠিক হলেও এই রাজ্যগুলোর বিধানসভা নির্বাচন ভারতের অন্যতম বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য সুখবর বয়ে আনছে না। টানা দুই মেয়াদ পরে ক্ষমতার বাইরে যেতে হতে পারে তামিল নাড়ুর এআইএডিএমকে। অপরদিকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং আঞ্চলিক দল ডিএমকে পালে নতুন হাওয়া লাগবে। আর বামফ্রন্ট আগের চেয়ে কিছুটা শক্তি ফিরে পেতে পারে।
দুটি বুথফেরত জরিপে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের আভাস দেওয়া হয়েছে। একটি জরিপে এগিয়ে রয়েছে এবার এই রাজ্যে বিপুল আলোচনার জন্ম দেওয়া বিজেপি। আর দুটি বুথফেরত জরিপে বলা হচ্ছে, এই রাজ্যে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং কোনো পক্ষই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনের দৌড়ে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফ জোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালের নির্বাচনে আরও বড় জয় নিয়ে পুনর্নির্বাচিত হয় তারা। এবার তাদের আসন কমার পাশাপাশি বিজেপির শক্ত অবস্থান তৈরির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইন্ডিয়া নিউজ ও জান কি বাত–এর যৌথভাবে করা বুথফেরত জরিপে ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ১৬২ থেকে ১৮৫ আসন পেয়ে জয়ী হতে পারে বিজেপি। আর মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ১০৪ থেকে ১২১ আসন। অপরদিকে টাইমস নাউ সিভিওটার–এর জরিপে তৃণমূলের পক্ষে ১৫২ থেকে ১৬৪ আসন এবং বিজেপির ঝুলিতে ১০৯ থেকে ১২১ আসন আসতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। আরেকটি জরিপেও তৃণমূলের পক্ষে ১৬৯ থেকে ১৯১ আসন এবং বিজেপির ভাগে ৯৭ থেকে ১১৯ আসন জোটার আভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টুডে এক্সিস এবং রিপাবলিক টিভি–সিএনএক্স এর জরিপে ঝুলন্ত বিধানসভার কথা বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৮ আসন পাবে না কোনো পক্ষ। এর যে কোনোটি সত্য হলেই তা বিজেপির জন্য তা হবে বড় সাফল্য।
বুথফেরত জরিপে কংগ্রেসের জন্য কোনো সুখবর নিয়ে আসছে না আসাম। এই রাজ্যের ১২৬ আসনের মধ্যে ৭৩টিতে জয়ী হয়ে বিজেপিরই ক্ষমতা ধরে রাখার আভাস দেওয়া হয়েছে।
কেরালায় বামফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন এলডিএফ জোট ক্ষমতা ধরে রাখছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সিপিআই (এম) নেতা পিনারাই ভিজায়ন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের জোট বিধানসভার ১৪০ আসনের মধ্যে ৮৭টি পেতে যাচ্ছে বলে বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে, যেখানে সরকার গড়ার জন্য দরকার ৭১টি আসন। এই রাজ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটের ভাগে ৫১ আসন আসতে পারে। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ রাজ্যে কয়েক দফা গেলেও তাতে খুব একটা সুবিধা হবে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই রাজ্যে বিজেপি দুটি আসনে জয় পেতে পারে বলে জরিপে বলা হয়েছে।
বুথফেরত জরিপের ফল অনুযায়ী ক্ষমতার পালাবদল হতে যাচ্ছে তামিলনাড়ুতে। দুই মেয়াদ পরে ক্ষমতাসীন এআইএডিএমকেকে হটিয়ে এবার ক্ষমতায় আসতে পারে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোট। এই রাজ্যের বিধানসভার ২৩৪ আসনের মধ্যে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১১৮টি। তা অনায়াসেই ডিএমকে পেতে যাচ্ছে বলে বুথফেরত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে জয়ললিতার মৃত্যুর পর এবারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনের পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এদাপ্পাদি কে পালানিসামি নেতৃত্বাধীন এআইএডিএমকে। বিজেপির মিত্র এই দলটি এবার মাত্র ৫৮টি আসন পেতে পারে বলে জরিপের আভাস। এই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী করুনানিধির সন্তান ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এম কে স্টালিনের নেতৃত্বে ডিএমকে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনেও ভালো ফল করেছিল।
কেরালায় বামফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন এলডিএফ জোট ক্ষমতা ধরে রাখছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সিপিআই (এম) নেতা পিনারাই ভিজায়ন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের জোট বিধানসভার ১৪০ আসনের মধ্যে ৮৭টি পেতে যাচ্ছে বলে বুথফেরত জরিপে বলা হয়েছে,
বুথফেরত জরিপে কংগ্রেসের জন্য কোনো সুখবর নিয়ে আসছে না আসাম। এই রাজ্যের ১২৬ আসনের মধ্যে ৭৩টিতে জয়ী হয়ে বিজেপিরই ক্ষমতা ধরে রাখার আভাস দেওয়া হয়েছে। এখানে সরকার গঠনে প্রয়োজন ৬৪ আসন। আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সমালোচনা হলেও তাঁর দলেই আস্থা রাখছে রাজ্যের জনগণ। পুরান ঘাঁটি আবার ফিরে পেতে এবার সেখানে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়েছিল কংগ্রেস। এরপরেও তারা এবার সর্বোচ্চ ৫২টি আসন পেতে পারে বলে জরিপে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরিতে অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেস (এআইএনআর কংগ্রেস) নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স এনডিএ–এর জয়ের আভাস পাওয়া গেছে। বিধানসভার ৩০ আসনের এই রাজ্যে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬টি আসন। কয়েকটি জনমত জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, এই রাজ্যে এনডিএ জোট ২১টি আসন পেতে পারে। অপরদিকে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সেক্যুলার প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের ভাগ্যে জুটতে পারে ৯টি আসন।
২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুদুচেরিতে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেস নেতা ভি নারায়ণস্বামী। নির্বাচনের মাত্র মাস তিনেক আগে বিধানসভায় আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করেন তিনি। এবার ভোটে তাঁদের সঙ্গে ডিএমকে ও সিপিআই রয়েছে। অপরদিকে এআইএনআর কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেওয়া এন রাঙ্গাসামি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল মেয়াদে কংগ্রেসের হয়ে পদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১১ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নতুন দল এআইএনআরসি গড়ে তোলেন। এবার বিজেপি এআইএডিএমকের সঙ্গে জোটবেঁধে ভোটে লড়েছেন তিনি।
গত ৬ এপ্রিল একদিনে তামিল নাড়ু ও কেরালার সঙ্গে পদুচেরিতে ভোট হয়। আর পশ্চিমবঙ্গে গত ২৭ মার্চ শুরু হয়ে আট দফায় ২৯ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শেষ হয়। আসামেও ২৭ মার্চ শুরু হয়ে তিন ধাপে ৬ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শেষ হয়। রোববার একযোগে এই পাঁচ রাজ্যে ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হবে।