গ্রেনেড হামলার জঙ্গির সঙ্গে পাকিস্তানে ছিলেন মামুনুল’

Slider রাজনীতি

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জড়িত জঙ্গিদের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন দাবি করেছে পুলিশ। ওই হামলার সঙ্গে জড়িত এক জঙ্গির সঙ্গে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন ছিলেন মামুনুল হক। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গি ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করেন তিনি। আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ।

তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিবাদের সঙ্গে তার (মামুনুল) সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। মামুনুলের ভগ্নিপতি মাওলানা মুফতি নেয়ামত উদ্দিন, মাওলানা তাজউদ্দীন ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একবার নেয়ামত উদ্দিন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তাকে পরে ছাড়িয়ে আনে। এই নেয়ামতের সঙ্গে ২০০৫ সালে পাকিস্তানে গিয়ে ৪৫ দিন ছিলেন মামুননুল। সেখানে বিভিন্ন জঙ্গি ও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করেন।’

২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতালকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চলে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়। পরে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ আটক হন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। পরে একাধিক বিয়ের কথা জানান হেফাজতের এই নেতা।

গত ১৮ এপ্রিল দুপুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করার পর মোহাম্মদপুর থানার নাশকতার এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনুলকে সাত দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই নেতার ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের’ কথাও জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মামুনুল হেফাজতে ইসলামকে পাকিস্তানের একটি সংগঠনের আদলে পরিচালনা করতে চাইছিলেন। তিনি (মামুনুল) রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী ছিলেন। জামায়াতের সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা ছিল তার।’ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মামুনুল হকের জব্দ করা মোবাইল ফোন থেকে বাবরি মসজিদের নামে কাতার, দুবাই ও পাকিস্তান থেকে টাকা আনার তথ্য-প্রমাণও মিলেছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, ‘মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিদেশ থেকে অর্থ আনার বিষয়েও তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেশের বাইরে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকা এনে তিনি বিভিন্ন মসজিদে-মাদ্রাসায় জঙ্গি, উগ্রবাদী কাজে ব্যবহার করতেন।’

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমও গতকাল শনিবার জানান, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজেদের নেতাকর্মীদের নিয়ে সারা দেশে “রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন” নামক একটি সংগঠন তৈরি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংগঠনটি সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করছে।’

মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আয়োজকদের বাধ্য করা হচ্ছে হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ওয়াজে নেওয়ার জন্য। দেশের কোন মাহফিলে কে ওয়াজ করবেন, সেটাও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর মাধ্যমে তারা উগ্রবাদী বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করছে।’

তা ছাড়া মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ব্যবহার করে হেফাজত নেতার বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। মাদ্রাসা দখলের মতো অপকর্ম ও অনেকের নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের ‘‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’’ নামের সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মত এদেশকে গড়ে তুলতে চায়। যার পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *