বিশ্বের সবথেকে ভয়াবহ কোভিড ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ। ভারত আকার ও জনসংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলোর একটি। এটিই এখন কোভিড মোকাবেলায় দেশটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন দেশটিতে প্রায় ২৭ লাখ ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। তারপরেও দেশের ১০ শতাংশ মানুষকেও ভ্যাকসিন দিতে পারেনি ভারত।
এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে ভারতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১ কোটি ৮৪ লাখের পর এটিই বিশ্বে সর্বোচ্চ। এ মাসের প্রথম থেকে হঠাৎ করেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে ভারতের করোনা পরিস্থিতি। বর্তমানে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা পরিস্থিতি সামালে হিমসিম খাচ্ছে। হাসপাতালগুলো রোগিতে ভরে গেছে। সংকট দেখা দিয়েছে মেডিক্যাল অক্সিজেন সরবরাহ নিয়েও। আইসিইউগুলো পূর্ণ হয়ে আছে। ভ্যান্টিলেটর যা ছিল তাও প্রায় সবই ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশজুড়ে লাশের মিছিল দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু ভারত এই অবস্থায় পৌছাল কীভাবে? গত বছরের শেষাংশে গিয়ে করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপ কমতে থাকে ভারতে। একটানা ৩০ সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ নিচের দিকেই ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এসে আবারো বাড়তে শুরু করে সংক্রমণের সংখ্যা। মাঝখানে যে বিশাল সময় সংক্রমণ কম ছিল তখন সরকার কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো কিংবা ভ্যাকসিন নিশ্চিতের মতো বিষয়গুলোতে আলাদা কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি। দেশটির পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কে শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, সরকারের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না।
এরকম পরিস্থতিতেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কুম্ভ মেলায় কড়াকড়ি আরোপ করেনি সরকার। অনেকেই এখন আশঙ্কা করছেন, হয়ত এই মেলা থেকে করোনার বড় একটি সংক্রমণ দেখতে হবে। রেড্ডির মতে, সরকার দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন গত দুই সপ্তাহ ধরে ভারতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৮.০৪ জনের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এ হার এর আগে ছিল মাত্র ৬.৭৫। বিশেষজ্ঞরা এখন মনে করছেন, ভারতে করোনার নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। এটি অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর থেকে অধিক ভয়াবহ।
ভারত তার জিডিপির ক্ষুদ্র একটি অংশ ব্যবহার করে দেশটির স্বাস্থ্য খাতে। গত বছর করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ভারত কঠিন লকডাউন ঘোষণা করে। এরফলে দেশটির বহু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সরকার বেশ কিছু সময় পেয়েছিল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য। সরকার তখন অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, অস্থায়ী হাসপাতাল এবং বিভিন্ন স্থাপনাকে হাসপাতাল বানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মহামারির দীর্ঘমেয়াদি অবস্থার দিকে তাকায়নি। হাসপাতালগুলোর ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মহামারি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়নি। অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টাও করতে পারতো ভারত। কিন্তু প্রথম ঢেউ চলে যাওয়ার পর শিল্পগুলোতে অক্সিজেন বিক্রি শুরু হয়। অথচ এখন পুরো দেশজুড়ে অক্সিজেনের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারত সরকার মেডিক্যালের প্রয়োজনে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে একাধিক প্লান্ট নির্মান শুরু করে। কিন্তু ৬ মাস পরেও সেগুলোর কোনো সুফল দেশটি পাচ্ছে না।