ঢাকা: বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যেই টানা হরতালে দুই দফা পেছানোর পর শুক্রবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
এদিন সকাল নয়টা থেকে একটা পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসিতে সকালে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংষ্কৃতি বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
আর কারিগরী বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
এসব পরীক্ষা গত ২ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিএনপি জোটের টানা হরতালে পরীক্ষা পিছিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারিতে নতুন সূচি ঘোষণা করা হয়।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার জন্য সব বোর্ডে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কিমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব বক্কর ছিদ্দিক।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মোবাইল টিম কাজ করবে বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার নেওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
এদিকে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও সবার আন্তরিক সহায়তা চেয়েছেন।
শুক্রবার সকাল নয়টায় শিক্ষামন্ত্রী আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করবেন। এরপর আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন তিনি।
হরতালের কারণে ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাও পিছিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে একটা পর্যন্ত এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংষ্কৃতি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা হবে।
আর মাদ্রাসা বোর্ডে হবে হাদীস শরীফ এবং কারিগরী শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি-২ (১৯২২) এবং ইংরেজি-২ (৮১২২) পরীক্ষা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করতে না পেরে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অবরোধের মধ্যেই ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাড়ায় সরকার বিরোধী জোট ২০ দল।
বিভিন্ন মহল থেকে পাবলিক পরীক্ষার সময় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানালেও এধরনের হরতাল-অবরোধ পালন করছে বিএনপি জোট।
পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা ১০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে ১১-১৬ মার্চ পর্যন্ত।
বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতালে এর আগেও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
২০১৩ সালের এসএসসির ৩৭টি এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের কারণে পিছিয়ে যায়।
ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষাও হরতালে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া ২০১৪ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠ্যেয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়ে। এসময় জেএসসি-জেডিসির চার দিনের ৯টি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।