ঢাকাঃ রাজধানীতে পুলিশ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দিয়ে সাহিদা শওকত জেরি নামে একজন নারী চিকিৎসক বলেছেন, আমি দেখবো ডাক্তার বড় নাকি পুলিশ বড়। ডাক্তারদের এত হয়রানি করছে যে ডাক্তাররা অতিষ্ঠ।
রোববার ওই নারী ও পুলিশ সদস্যদের সাথে বাকবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে সরকারি বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তা ওই নারী চিকিৎসকের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে পুলিশ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। দেশব্যাপী চলমান সর্বাত্মক লকডাউনের পঞ্চম দিন রোববার দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে ওই চিকিৎসকের গাড়ি থামিয়ে পরিচয়পত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। এতে ওই চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশ সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তুই-তুকারি করতে থাকেন।
এ সময় তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে বলেন, ‘আমি শওকত আলী বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার নাম সাহিদা শওকত জেরি। আমি একজন ডাক্তার। আমি অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।’
তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি এইটুকু বোঝেন না। আমার এত বড় গলা কেন? আমি দেখবো, ডাক্তার বড় নাকি পুলিশ বড়। আমি আজ আন্দোলনে নামবো। আমার গাড়ি আটকাইছে। ভালো হইছে, আমি দেখবো কে বড়?
তিনি পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুই মেডিক্যালে চান্স পাস নাই, তাই তুই পুলিশ। আমি চান্স পাইছি তাই আমি ডাক্তার।’
ওই নারী চিকিৎসক ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ করে বলেন, ওনাকে (পুলিশ সদস্য) স্যরি বলতে হবে। ওনাকে স্যরি বলতে বলেন। তারপর আমি এখান থেকে যাবো।
তিনি বলেন, ‘আমি বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার বাবা যুদ্ধ করেছিলো বলেই তোমরা পুলিশ হয়েছো।’
তখন পুলিশও পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘আমরাও ভেসে আসিনি। আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আপনার বাবা একা যুদ্ধ করে নাই।’
ভিডিওতে দেখা যায়, দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাহিদা শওকত জেরি ভ্রাম্যমাণ আদালতের চেকে পড়েন। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসন অফিসের সহকারী কমিশনার শেখ মো: মামুনুর রশিদ আদালত পরিচালনা করছিলেন। নিউমার্কেট থানার একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে একাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন।
চেক পোস্টে পুলিশ সদস্যরা চিকিৎসকের কাছে তার আইডি কার্ড দেখতে চান। সাথে আইডি কার্ড আনেননি বলে জানান চিকিৎসক সাহিদা শওকত জেরি। এরপর তার কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া হয়। এ সময় জেরি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বলেন জিজ্ঞাসা করেন, ডাক্তারের মুভমেন্ট পাস লাগে?
তিনি গাড়িতে বিএসএমএমইউ স্টিকার ও হাসপাতাল থেকে পাওয়া তার লিখিত পাস দেখান। এরপরও পুলিশ তার কাছে আইডি কার্ড দেখতে চান। এ সময় জেরি আরো উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে বলেন, ‘আমি ডাক্তার। করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। আপনারা কয়জন মরছেন। আমরা ১৩০ জন মরেছি।’
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনি ধমক দিচ্ছেন কেন? আমরা প্রশাসনের লোক। ১০০ বার আপনার কাছে আইডি কার্ড দেখতে চাইতে পারি।’
এরপর চিকিৎসক বলেন, ‘আমি বীর বিক্রমের মেয়ে।’ তখন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আমিও বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। আমরা কি ভাইসা আসছি নাকি?’
চিকিৎসক বলেন, ‘আমি শওকত আলী বীর বিক্রমের মেয়ে। আমার বাবা যুদ্ধ করেছিলো বলেই তোমরা পুলিশ হয়েছো।’ এ সময় সেখানে দায়িত্বরত নিউ মার্কেট থানা পুলিশের পরিদর্শক বলেন, ‘আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আপনার বাবা একা যুদ্ধ করেনি।’
চিকিৎসক জেরি গাড়িতে উঠতে উঠতে বলতে থাকেন, ‘ডাক্তার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’ তখন পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘কোনো ডাক্তার হয়রানি হচ্ছে না।’
এরপর গাড়ি রাস্তার একপাশে নিয়ে তিনি (চিকিৎসক সাহিদা শওকত জেরি) কেন খারাপ ব্যবহার করেছেন, তা জানতে চান ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তার কাছে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি আমাকে তুই-তুকারি করতে পারেন না। জীবন আমরাও দিচ্ছি। আন্দোলনের ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা কি ভাইসা আসছি?’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি প্রশাসনের লোক। ইউনিফর্ম থাকার পরও সাথে আইডি কার্ড আছে।’ তখন চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ডাক্তার। গায়ে অ্যাপ্রন আছে। আপনি মেডিক্যালে চান্স পাননি বলে পুলিশ হয়েছেন।’
চিকিৎসক দীর্ঘ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকে সরি বলতে বলেন। শেষপর্যন্ত পুলিশ স্যরি বলেছে কি না, তা জানা যায়নি।