ঢাকাই ছবির ৭০ থেকে ৮০ দশকের সুপারস্টার ওয়াসিম। আজ রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। কিংবদন্তী অভিনেত্রী কবরীর মৃত্যুর একদিনের মাথায় ঢালিউড হারালো এই সুপারস্টারকে। তবে তিনি করোনায় মারা যাননি। মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্যজণিত কারণে।
সিনেমায় আসার আগে ওয়াসিমের নাম ছিলো মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। কলেজের পড়াকালীন তিনি বডি বিল্ডার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য মি. ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন। তিনি মিস্টার ঢাকা’- নির্বাচিত হোন। সিনেমায় আসার পর এই বডিবিল্ডার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ থেকে হয়ে উঠলেন নায়ক ওয়াসিম।
ওয়াসিম ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর জেলার আমিরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭২ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এস এম শফীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। শফী এই সুদর্শন মানুষটিকে দেখে অভিনয়ে আনতে চাইলেও ওয়াসিমের তেমন ইচ্ছে ছিল না। কিন্ত শফীর আগ্রহেই ১৯৭২ সালে তার পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মোহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াসিম অভিনীত ও এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ তাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটি বাম্পার হিট হয় আর ওয়াসিমকে অভিনেতা হিসেবে পৌঁছে দেয় অনন্য উচ্চতায়।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্রে ওয়াসিম ছিলেন শীর্ষ নায়কদের একজন। সাহসী নায়ক বলা হতো তাকে। আবার কেউবা বলতেন ওয়াসিম মানে বাহাদুর নায়ক। ওয়াসিম ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ধারার ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী ড্যাশিং হিরো। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়াসিমের তখন একচেটিয়া রাজত্ব। পোশাকি, সামাজিক, গ্রামীণ, লাভস্টোরি, মারদাঙ্গা সব ধরনের ছবিতেই তার নাম। পর্দায় ওয়াসিম যখন ঘোড়া চালিয়ে আসতেন তখন ছবিঘর করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠত। তার নাম দিয়েই ছিল তখন উল্লাস। ওয়াসিম ১৫০-এর মতো ছবিতে নায়ক ছিলেন। তার অভিনীত অধিকাংশ ছবিই ব্যবসায়িকভাবে সফল।
ওয়াসিম অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবিকে সফল করেছিলেন । তবে চিত্রনায়িকা অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানার সঙ্গে অভিনীত তার ছবিগুলো সবচেয়ে বেশি সাফল্য পায়।