চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের চিত্রনায়ক ওয়াসিম আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নায়ক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান। কিছুদিন ধরে তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন ওয়াসিম।
ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। কারণ, দেশে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে হাসপাতালে রাখা নিরাপদ নয়। এক সময় বাণিজ্যিক-অ্যাকশনের পাশাপাশি ফোক-ফ্যান্টাসি সিনেমার এক নম্বর আসনটি দখলে ছিল ওয়াসিমের।
১৯৭২ সালে ঢাকাই সিনেমাতে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’র মাধ্যমে। আর নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা ততই আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেছিলেন তিনি।
নায়ক হিসেবে তার প্রথম সিনেমা ‘রাতের পর দিন’। মহসিন পরিচালিত এ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৪ সালে। মুক্তির পর রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান ওয়াসিম। এরপর অ্যাকশন এবং ফোক-ফ্যান্টাসি ধাঁচের অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।
লম্বা সময় ধরে লাইট-ক্যামেরার সামনে নেই ওয়াসিম। সিনেমা সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানেও দেখা যায় না তাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে শয্যাশায়ী এ অভিনেতা। মূলত ব্রেন এবং লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ওয়াসিম ছিলেন জানা গেছে।
২০১০ সাল পর্যন্ত টানা অভিনয় করেছেন ওয়াসিম। শাবানা, ববিতা, কবরী, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষের বিপরীতি অভিনয় করেছেন তিনি।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দি রেইন’, ‘রাজদুলারী’, ‘বাহাদুর, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘বেদ্বীন’, ‘ঈমান’, ‘লাল মেম সাহেব’ ইত্যাদি। অনেক দিন ধরে সিনেমা থেকে দূরেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তার নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি।
১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর জেলার মতলব জন্মগ্রহণ করেন এ অভিনেতা। সত্তরের দশক থেকে ঢাকাই সিনেমায় একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ওয়াসিমের। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন ওয়াসিম। বিশেষ করে ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ঘরনার ছবির নায়ক হিসেবে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এক সময়ের দর্শকপ্রিয় এই অভিনেতার রুপালী পর্দায় যাত্রাটা অবশ্য নায়ক হিসেবে হয়নি। ১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। এর দুই বছর পর নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে। ১৯৭৪ সালে মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক রূপে আবির্ভাব ঘটে ওয়াসিমের। এক ছবিতেই বাজিমাত। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকেন।
তবে ১৯৭৬ সালে তার অভিনীত এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
সবমিলিয়ে ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ওয়াসিম।
এদের মধ্যে সুপারহিট ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো – দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান।
এসব ছবিতে ওয়াসিমের বিপরীতে ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অনেক জনপ্রিয় নায়িকা।
তাদের মধ্যে অলিভিয়া, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, কবরী, শাবানার সঙ্গে বেশি সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
অলভিয়ার বিপরীতে ওয়াসিম অভিনীত ‘লাল মেম সাহেব’ ছবিটি আজও সিনেপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দেয়।
কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানার অভিনীত ‘রাজ দুলালী’ ছবিতে ওয়াসিমের অভিনয় দর্শকনন্দিত হয়।
এছাড়া অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে জুটি বেধে করা ওয়াসিমের ছবি ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘রসের বাইদানী’ ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়।
সবমিলিয়ে ১৫২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন ওয়াসিম।
সত্তর ও আশির দশকে রাজা, রাজপুত্র বলতে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ওয়াসিমকেই কল্পনা করতেন।
কালজয়ী এই অভিনেতা ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরের মতলবে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
মূলত ওয়াসিমের নেশা ছিল বডি বিল্ডিংয়ে।
১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন ওয়াসিম।