দিনাজপুরে সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, নির্বাচন অফিসসহ অনেক জায়গায় যাচ্ছেন। এক নারী এসব কিছু করছেন শুধু নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে। আশ্বর্য হলেও এটাই ঘটেছে উপজেলাটিতে।
জানা গেছে, স্বামীর অবসর ভাতা বেশ কয়েক বছর ধরে তুলতে পারলেও হঠাৎ করে ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাতা প্রদান বন্ধ রেখেছে। আর তাই বর্তমানে নিদারুন দারিদ্র্যতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সেই নারী।
উপজেলার ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের বাসিন্দা মৃত ফজির উদ্দিনের স্ত্রী সহিদা বেগম। বাস্তবে জীবিত থাকলেও ভোটার তালিকায় তিনি মৃত। ভোটার তালিকায় মৃত হওয়ায় স্বামীর অবসর ভাতা উত্তোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনকি ভোট দিতেও পারছেন না।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে ছয় মাস ধরে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি সহিদা বেগমের। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না ভোটার তালিকা থেকে আমার নাম কর্তন করা হয়েছে। স্বামীর অবসর ভাতা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে শুনি যে, আমার নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। আমি নাকি মৃত। আমি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছি। আমাকে কেন মৃত হিসেবে ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করা হলো, তার বিচার চাই। কে আমাকে মেরে ফেলেছে, এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আমাকে ছয়মাস ধরে হয়রানি করেছে। ভোটার তালিকায় পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছি। এখনো ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বারবার যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত কাজ না হওয়ায় আমি হতাশ হয়ে পড়েছি।’
ভুক্তভোগী বলেন, ‘নির্বাচন অফিস থেকে ভাতার বই নিয়ে ঢাকায় গিয়ে তদবির করতে বলেছে। প্রচণ্ড আর্থিক কষ্ট ও করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকায় গিয়ে তদবির করা অসম্ভব। এদিকে অর্থাভাবে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. ময়েন উদ্দিন শাহ বলেন, ‘ওই মহিলার নাম ভোটার তালিকা থেকে ভুলবশত কর্তন করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে জীবিত ও সুস্থ আছেন।’ ওই নারী যে জীবিত রয়েছেন, সে বিষয়ে চেয়ারম্যান একটি প্রত্যায়নপত্র দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক জানান, গত ২০ জানুয়ারি ভোটার তালিকায় ওই নারীর নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঢাকা আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক বরাবরে পত্র দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো উত্তর আসেনি।