সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কক্ষের সামনে লাগানো হয়েছিল তার নামফলক। সভাপতি হিসেবে এই কক্ষে বসার আগেই চলে গেলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মতিন খসরু। বুধবার দুপুরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও কুমিল্লায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সহ বিশিষ্টজনেরা শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে গতকাল চলেনি কোনো বিচারকাজ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকালে মারা যান আবদুল মতিন খসরু।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন খসরুকে ‘রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, আবদুল মতিন খসরু এসোসিয়েটস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে আবদুল মতিন খসরুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। জানাজা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। তিনি আবদুল মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। জানাজায় আবদুল মতিন খসরুর একমাত্র ছেলে আবদুল মোনেম ওয়াসিফ তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আবদুল মতিন খসরুর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরদেহ কুমিল্লার বুড়িচং নিয়ে যাওয়া হয়। কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বাদ জোহর, এরপর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর, উপজেলার মিরপুরে বাদ আসর তার শেষ জানাজা শেষে পৈতৃক বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। গত ১২ই মার্চের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আব্দুল মতিন খসরু সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। সিএমএইচে থাকা অবস্থায় গত ১২ই এপ্রিল মতিন খসরুর নেতৃত্বাধীন নতুন কমিটি দায়িত্ব বুঝে নেয়। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে আব্দুল মতিন খসরুর নামফলক টাঙ্গানো হয়। কিন্তু সেই কক্ষে আর বসা হলো না তার।