বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে আগামীকাল বুধবার থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের ‘কঠোর লকডাউন’ এবং এই সময়ে বাইরে বের হতে হলে অনলাইন থেকে ‘মুভমেন্ট পাস’ বা চলাচলের অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশপ্রধান বেনজির আহমেদ বলেছেন, অতি প্রয়োজনে বাইরে যাতায়াতের জন্য অবশ্যই মুভমেন্ট পাস প্রদর্শন করতে হবে।
এর আগে সোমবার সরকারি যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, তাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
লকডাউন কার্যকর করতে সরকারের ১৩ দফা বিধি নিষেধে বলা হয়েছে, ‘অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, লাশ দাফন বা সৎকার এবং টিকা কার্ড নিয়ে টিকার জন্য যাওয়া) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বেড়ে গেছে এবং সোমবারও ৮৩ জন মারা গেছে এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজারের বেশি।
এর আগে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত বিধিনিষেধ দেয়া হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি।
এখন বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, সরকারের কাল থেকে কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে তারাও এবার কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং তার আওতায় ‘মুভমেন্ট পাস’ ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে আসতে দেয়া হবে না।
মুভমেন্ট পাস পেতে যা করতে হবে :
অনলাইনে মুভমেন্ট পাস দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ওয়েবসাইট (https://movementpass.police.gov.bd/) খোলা হয়েছে যা আজ মঙ্গলবার উদ্বোধন করেছেন আহমেদ।
পুলিশ জানিয়েছে, দেশের যেকোনো নাগরিক এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কয়েকটি তথ্য সরবরাহ করে পাস সংগ্রহ করতে পারবেন।
ওয়েবসাইটিটির উদ্বোধন করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ বলেছেন, ক্রান্তিকাল মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য দরকার ও সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সবাই ঘরে থাকবেন যাদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে সরকারি আদেশে। কিছু অতি প্রয়োজনে বের হতে লাগতে পারে, যেমন কাঁচাবাজার বা ওষুধ; সেজন্য মুভমেন্ট পাস চালু করছি। অনলাইন থেকে পাস নিয়ে মুভমেন্ট করবেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, আবেদনকারীকে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পাসের জন্য আবেদন করতে হবে। শুরুতে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে এবং কোথা থেকে কোথায় যাবেন সেই তথ্য দিতে হবে।
এরপর নির্দিষ্ট ফরমে কিছু তথ্য চাওয়া যাবে এবং তাকে এরপর ছবি দিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে।
পরে সাইট থেকেই পাসটি ডাউনলোড করা যাবে এবং চলাচলের সময় পুলিশকে এটি প্রদর্শন করতে হবে।
এক একটি মুভমেন্ট পাস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা বাইরে থাকা যাবে। প্রতিটি গন্তব্যে যাওয়া এবং ফিরে আসার জন্য দুটি মুভমেন্ট পাস সংগ্রহ করতে হবে বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে চলাচলের জন্য ১৪টি শ্রেণিতে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেবে পুলিশ যার মধ্যে রয়েছে মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচাবাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসাকাজে নিয়োজিত কিংবা কৃষিকাজ, ব্যবসা পণ্য পরিবহনের মতো বিষয়গুলো।
যে অনুষ্ঠানে এই মুভমেন্ট পাসের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়, সেখানেই বলা হয়, সোমবার থেকে চালু আছে এই ওয়েবসাইট এবং এরই মধ্যে এখানে লক্ষাধিক মানুষ আবেদন করে পাস সংগ্রহ করেছেন।
বিবিসির তরফ থেকে সরেজমিনে এই ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখা গেছে, ওয়েবসাইটটি কিছুটা ধীরগতির, তবে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুমোদিত মুভমেন্ট পাস পাওয়া যাচ্ছে এবং তা ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
বেনজির আহমেদ আরো যা বলেন :
‘রাস্তাঘাটে আড্ডা দিবেন না। মুরুব্বি বা যুবকরা অনেক সময় আড্ডা দিতে পছন্দ করে। এগুলো পরিহার করতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না। অতি প্রয়োজনে বের হতে হলে মাস্ক পড়তে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
বেনজির আহমেদ বলেন, কাল থেকে রাস্তাঘাটে বিনা প্রয়োজনে কাউকে দেখতে চাই না। প্রয়োজন আছে কিনা সেটা তাকেই জাস্টিফাই করতে হবে। কোনোভাবেই পুরো বাংলাদেশকে আইসিইউতে পরিণত করা যাবে না। এক বা দুই সপ্তাহ কষ্ট করলে এবারো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। দরকারে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হবেন।’
লকডাউন ঘোষণার খবরে অসংখ্য মানুষের ঢাকার ছাড়ার দিকে ইঙ্গিত করে আইজিপি বলেন, অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত বন্ধ করতে হবে।
‘গতবার প্রথম ওয়েভের সময় লাখ লাখ লোক গ্রামাঞ্চলকে আক্রান্ত করেছেন। এবারো অনুরোধ করা হয়েছিলো যে নিজ জায়গা ছাড়বেনা কিন্তু অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। যিনি ঢাকা ছেড়েছেন তিনি হয়তো পরিবার, চারপাশ অর্থাৎ কমিউনিটিকে আক্রান্ত করবেন। এগুলো নৈতিকভাবে অন্যায়।’
তিনি বলেন এ ধরণের মুভমেন্ট থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা গতকাল ও পরশু ফেরিঘাট দিয়ে, হেঁটে, দৌড়ে, ঠেলাগাড়ি দিয়ে বা যেভাবেই হোক বাড়ি গেছেন তারা ওখানেই থাকবেন।
‘গ্রামবাসী খেয়াল রাখবেন। যারা গেছেন তাদের অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা উচিৎ। উনি কিন্তু পুরো এলাকাকে আক্রান্ত করতে পারেন। সমাজে যারা আছেন তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
সূত্র : বিবিসি