সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েকটি হাওরের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধান কাটার আগ মুহূর্তে এমন দুর্যোগে কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার পর প্রায় ৪০ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ধানের জমিতে কয়েক ইঞ্চি শিলের স্তূপ পড়েছিল বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। শিলাবৃষ্টিতে উচ্চ ফলনশীন জাতের বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের অন্তত ৬০-৭০ ভাগ ধান ঝরে জমিতে পরে গেছে। কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও পাটের চারারও ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার সদর, পাইকুরাটি, সেলবরষ, সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ও বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বিভিন্ন হাওরে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের নোয়াবন্দ গ্রামের কৃষক পারভেজ আহমদ (৩০) বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে আমার ধানের শেষ হয়ে গেছে। এবার ১৫ কেদার জমি করেছিলাম। এরমধ্যে ১০ কেদার ছিল বিআর-২৮ জাতের। এই ধানটার প্রায় ৭০ ভাগ ধান শিলাবৃষ্টিতে ঝড়ে গেছে । অন্য ৫ কেদার জমির ৫০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো সব কৃষকেরই ক্ষতি হয়েছে।’
পাইকুরাটি ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের কৃষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করে ৭০ কেদার বোরো জমিতে বিআর-২৮ ও ২৯ জাতের ধান চাষ করেছিলাম। ধানের ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। আশা ছিল অন্তত ১২০০ মণ ধান পাব। কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ ধান ঝড়ে গেছে। পাকা ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখন ৩/৪ শত মণ পাব কিনা সন্দেহ আছে। এ ছাড়া শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ধান শ্রমিকরা কাটতে চাইবে না।’
পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের টগার হাওর, হলদি হাওর, কুমারিয়া হাওর ও শাইলচাপড়া, আটলা বিল হাওরের প্রায় ৪০-৫০ ভাগ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। পাটের চারারও ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে পাটের চারা মাটিতে মিশে গেছে।’
ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে চার-পাঁচটা ইউনিয়নের বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে সদর, পাইকুরাটি, সেলবরষম ও সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ তেমন নয়। ধানের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য আমরা সকাল থেকে মাঠে কাজ করছি।’
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনতাসির মামুন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পরে উপজেলার সদর, সেলবরষ, সুখাইর বাজার দক্ষিণ ও পাইকুরাটি ইউনিয়নের হাওরে শিলাবৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। এতে বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালনা মো. ফরিদুল হাসান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ধর্মপাশার কয়েকটি এলাকায় শিলাবৃষ্টি হওয়ার খবর পেয়েছি। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। আজ বিকেলে ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব জানা যাবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বোরো মৌসুমে ধর্মপাশা উপজেলার ৩০ হাজার ৬৮৫ হেক্টর বোরো জমি চাষাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড ১২৫ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৩০ হাজার ৪৪০ হেক্টর ও দেশী জাতের ১২০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে।