তপ্ত হাওয়ায় ব্যাপকহারে ধান চিটা হওয়ার ঘটনা অতীতে ঘটেনি

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


তপ্ত হাওয়ায় এ রকম ব্যাপকহারে ধান চিটা হওয়ার ঘটনা অতীতে হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, গরম একটু বেশি গেছে, সাধারণত এ রকম ঘটনা হয় না। আগে হলেও অল্প জমিতে হয়েছে। এ রকম ব্যাপকভাবে হয়নি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে বলেও জানান তিনি।

দেশের হাওরাঞ্চলের নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৪ এপ্রিল রাতে বয়ে যাওয়া আচমকা গরম বাতাসে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের ধানের গাছগুলো এখন মিল্কিং স্টেজে (দুধ অবস্থায়) থাকায় যে এলাকা দিয়ে এই লু হাওয়া বা গরম ঝড়োবাতাস বয়ে গেছে ওই এলাকার ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আহাজারি করছেন সেদিন থেকেই। ইতোমধ্যে ওইসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহসহ সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। দেখছেনই তো, করোনাভাইরাস আগে ছিল না। এখন করোনাভাইরাসও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে সিন্ট্রম থাকত, এখন সিন্ট্রমও নাই। যাই হোক, যদিও এটা জাতীয় পর্যায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না; আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা তার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। এক ব্যক্তি যদি এক একর জমিতে ধান লাগিয়ে থাকেন এবং সেটা যদি নষ্ট হয়ে যায় সেতো আহাজারি করবেই। সে খাবে কী? এ কারণে সরকারও তাদের পাশে দাঁড়াবে। তাদের জন্য কী করা যায়, সে ব্যাপারে আগামী সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত আসবে, ইনশা আল্লাহ।

গত ৪ এপ্রিল বিভিন্ন জেলায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে (একেক এলাকায় একেক সময়) রাত ১১টা পর্যন্ত হঠাৎই এই গরম বাতাস বয়ে যায়। এতে ওইসব এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ধানের ক্ষেত পুড়েও গেছে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা। গত বুধবার রাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, রোববার হঠাৎ গরম বাতাস বয়ে যায়। যেসব ধানক্ষেতে ফুল আসছে, সেখান দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়ায় ফুলের রেণুটা পুড়ে গেছে। যার ফলে পরাগায়ন আর হবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে এবার ৪৮ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের টার্গেট ছিল। আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। সুতরাং এই ক্ষতি সামগ্রিকভাবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো প্রভাব পড়বে না। গতবারের চেয়ে এবার ফলন আরো ভালো হবে আশা করি। কিন্তু অনেক কৃষকের ক্ষতি হলো এটাই বিষয়। আর যদি কোনো দুর্যোগ না হয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব ইনশা আল্লাহ। এটাকে লু হাওয়া বলা যাবে কি না- জানতে চাইলে মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ ‘আপনি বলতে পারেন যে, কিছুক্ষণ গরম বাতাস বয়ে যাওয়ায় যেসব জায়গায় ধানের ফুল অবস্থায় ছিল, সেই জায়গায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তিনি গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। সুতরাং এই ঘটনায় জাতীয়ভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে না। তবে ব্যক্তিপর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষতির পরিমাণ কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এবং সচিব এখনো নেত্রকোনায়। ময়মনসিংহ হয়ে কাল ঢাকায় ফিরব। কী পরিমাণ ধানের ক্ষতি হয়েছে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে ১৫ হাজার হেক্টরের মতো হতে পারে সব মিলিয়ে। কোন কোন এলাকায় ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ শেরপুর ও গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এই গরম হাওয়া বয়ে গেছে। অনেক জেলায় খুবই কম, যেমন খুলনায় ১৬০ হেক্টরের মতো। আবার নেত্রকোনায় সবচেয়ে বেশি। ১০ হাজার হেক্টরের মতো হবে। তারপরে কিশোরগঞ্জ।

ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো সহযোগিতা দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের আউশ ধান আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের আউশে প্রণোদনা দেবো। যাদের আউশে নাই, আমনে দেবো, আমন না থাকলে বোরোতে দেবো। এছাড়া তাৎক্ষণিক কি করা যায় সেটা আমরা ভেবে দেখছি। মোট কথা সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *