গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় আরো ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৬২৬ জন৷ সুস্থ হয়েছেন তিন হাজার ২৫৬ জন৷ আগের দিন মঙ্গলবার একদিনে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬৬ জন মারা যান৷ এর আগে গত বছরে ৩০ জুন এক দিনে ৬৪ জন মারা যান৷
বাংলাদেশে এখন টেস্ট অনুপাতে শনাক্তের হার ২২.০২ ভাগ৷ আর মৃত্যুর হার শতকরা ১.৪৩ ভাগ৷ গত চার সপ্তাহে বাংলাদেশে এক লাখেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে৷ এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০ জনের বেশি মারা যাচ্ছেন৷ গড়ে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন৷
বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৯ হাজার ৪৪৭ জন৷ আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন৷ সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৬৩৯ জন৷
এদিকে করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ বেডের সংকট আরো তীব্র হয়েছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় পুরো ঢাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড খালি ছিলো মাত্র ১১টি৷ ঢাকার বাইরে আইসিইউ বেড খালি থাকলেও চিকিৎসকেরা গুরুতর করোনা রোগীদের ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে৷
করোনার সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য আরো আইসিইউ বেড প্রয়োজন৷ কিন্তু তার আগে প্রয়োজন সংক্রমণ কমানো৷ এটা কমানো না গেলে কত আইসিইউ বেড বাড়ানো যাবে? এরও তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে৷’
তার মতে, আক্রান্ত ১০ শতাংশের বেশি হলে করোনার উচ্চ ঝুঁকি বলা হয়৷ সেখানে বাংলাদেশে আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে৷ আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটিই এখন আরো বাড়ছে৷ ‘করোনার এই দ্বিতীয় ওয়েভ অনেকটা সুনামির ঢেউয়ের মত৷ ঢেউ বড় হচ্ছে৷’
করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউ এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর৷ ভয়াবহ বলা ঠিক হবে না৷ কারণ ভয়াবহ তো চূড়ান্ত খারাপ পর্যায়৷ এখন ভয়াবহ বললে এখনকার চেয়ে পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে তখন কী বলব৷’
তার মতে, করোনার এই পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি এখন নাজুক পর্যায়ে রয়েছে৷ কারণ যে লকডাউন দেয়া হয়েছে তা যে ঠিক হয়নি দুইদিন পর গণপরিবহন আবার চালুর মধ্য দিয়েই তা বোঝা গেছে৷ যেটা প্রয়োজন তা হলো স্বাস্থ্য সচেতনতা৷ বাংলাদেশের মত দেশে করোনা প্রতিরোধে এটাই সর্বোত্তম ব্যবস্থা৷ কারণ লকডাউনে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ বিপদে পড়ে৷ তাদের তো আর আর্থিক বা খাদ্য সহায়তা দেয়া হয় না৷
ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানলেই করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব৷ পুরো বাংলাদেশকে লকডাউনের আওতায় আনার দরকার নাই৷ এটা সম্ভবও নয়৷ খুব প্রয়োজন হলে ভয়াবহ আক্রান্ত কোনো এলাকা চিহ্নিত করে লকডাউন করা যায়৷ তবে তা করলে করতে হবে লকডাউনের নিয়ম মেনে, ঢিলেঢালা নয়৷ তা না হলে কাজে আসবে না৷
এই দুজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হলে এটা যাতে ছড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে সংক্রমণ ঠেকানো যায়৷ মার্কেট খোলা রেখে যদি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, হাত ধোয়া নিশ্চিত করা যায় তাহলে করোনা ছাড়াতে পারবে না৷ সংক্রমণ কমবে৷ গণপরিবহনেও তাই৷ জনসমাগম বন্ধ করতে হবে৷ দূরত্ব বজায় রেখে রাস্তা দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে সমস্যা নাই৷ সমস্যা হলো ভিড় করলে৷
তাই করোনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী নামানোর পরামর্শ দেন ডা. নজরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হন আর সেনা সদস্যরা যদি তাকে বুঝিয়ে মাস্ক পরিয়ে দেন তাহলে তিনি নিয়মিত মাস্ক পরবেন বলে আমার বিশ্বাস৷ জনসমাগম এড়িয়ে চলবেন৷ ভয় ছড়িয়ে নয়, মানুষকে বোঝাতে হবে, উদ্বুদ্ধ করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে৷’ এর সঙ্গে প্রয়োজন মানুষের সহযোগিতা, বললেন তিনি৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে