বিধিনিষেধ বা লকডাউন যাই বলা হোক তা আংশিক বাস্তবায়ন করলে সফলতা আসবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লকডাউন দিলে পুরো লকডাউন দিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, লকডাউন হলো করোনা নিয়ন্ত্রণের একটি বৈজ্ঞানিক পন্থা। এবং সেই বৈজ্ঞানিক পন্থাটা হলো সম্পূর্ণরূপে সবকিছুকে স্থবির করে দেয়া। জনসাধারণের চলাচলই শুধু নয়, সমস্ত রকমের কর্মকাণ্ডকে বন্ধ করে দেয়া। যাতে কোনোভাবেই এটা আর সংক্রমণ ছড়াতে না পারে। বাংলাদেশে লকডাউন বলতে প্রথম থেকে যে চিত্র আমরা দেখেছি এবং সরকারের যে ঘোষণা কোনোটাই বৈজ্ঞানিক নয়। এবং এখন যেটা পালিত হচ্ছে অর্থাৎ সরকারের ঘোষণা যেটা সেটা যেমন বিজ্ঞানসম্মত নয়।
তিনি বলেন, আংশিক লকডাউন বলতে কোনো লকডাউন নেই। লকডাউন মানেই হলো লকডাউন। ডা. মোজাহেরুল বলেন, লকডাউনটা যেহেতু বৈজ্ঞানিক নয়, তাই জনসাধারণ এটাকে সেভাবে নেয়নি। কারণ, এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই যেভাবে এটা ঘোষণা করা হয়েছে। এবং প্রতিপালিত হয়েছে। জনসাধারণ এটাকে লকডাউন হিসেবে নেয়নি। দ্বিতীয়ত, লকডাউন করার জন্য যেটা দরকার সেটা হলো জনগণের সহযোগিতা। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া কোনোদিন ঘোষণা দিয়ে লকডাউন পালন করা যায় না। কোনো রাষ্ট্র পালন করেনি। করতেও পারবে না। এখানে যে জিনিসটা দরকার সেটা হলো জনগণকে সম্পৃক্ত করা। তখন জনগণই লকডাউনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবে। এবং লকডাউন পালন করবে। এখন জনগণ সচেতন আছে কিন্তু যেহেতু সম্পৃক্ত হয়নি সে কারণেই তাদের মধ্যে যে একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সেটা হলো এই আংশিক লকডাউন তো কোনো সফলতা আনবে না। আর এটাতো লকডাউন না। জানালা খোলা রেখে দরজায় তালা মেরে রাখবো এটা হয় না। সুতরাং আগে লকডাউনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর জনগণের আস্থা আনতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকেও লকডাউন পালনের জন্য যে সকল ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন সেটা নিতে হবে। তাহলে লকডাউনটা ঠিকভাবে প্রতিপালিত হবে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, লকডাউনের পর সংক্রমণ কমছে না বাড়ছে এটা দেখতে হবে। সংক্রমণ না কমে বাড়তে থাকলে আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্দেশ্য হচ্ছে সংক্রমণ কমানো। সবকিছু বন্ধ করা নয়। বন্ধ করা হচ্ছে সংক্রমণ কমানোর একটি পদ্ধতি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সংক্রমণ কমানোর উপযোগী হলে এটা চলবে। আর বেড়ে গেলে আমাদের আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যেগুলো করছে তাদের অধিকাংশ মানুষের কোনো না কোনো অসুবিধা রয়েছে। এজন্য মানছে না। এটা মনে করা ঠিক না যে, মানুষ ইচ্ছা করে এগুলো করছে। তাদের সমস্যার সমাধান না করে লকডাউন সফল করা সম্ভব নয়।