করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এ বৈঠকে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চলমান লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধের বিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রোববার প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে গতকাল সোমবার থেকে আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চলমান লকডাউনে জারি করা নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৮ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়ে সরকারি অফিস চালানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার সচিবালয়েরও বেশির ভাগ দপ্তর খোলা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা তাদের বলে দিয়েছি, তাদের কমফোর্ট অনুযায়ী কমানোর জন্য। দরকারি কাজ চালানোর জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই থাকবে। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দেখি আমরা সাতদিন পর কী অবস্থা হয়। বৃহস্পতিবার আমরা রিভিউ করবো ইনশাআল্লাহ। মানুষকে তো কো-অপারেট করতে হবে। সবাই যদি একটু মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তবে তো অসুবিধা হওয়ার কথা না। করোনাভাইরাস টিকার পর্যাপ্ত মজুতের বিষয়ে সংশয় দূর করে নির্ধারিত সময় ৮ই এপ্রিল থেকেই এর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। অনির্ধারিত আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একটা বিষয়ে আলোচনা ছিল, ভ্যাকসিনের অবস্থাটা কি হবে? দ্বিতীয় ডোজ ৮ই এপ্রিল থেকে কি কন্টিনিউ করবে, নাকি করবে না। এটা প্রধানমন্ত্রী ক্লিয়ার করেছেন, ৮ তারিখ থেকে যে ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ডোজ শুরু হওয়ার কথা সেটা যথাযথভাবে চলবে। প্রথম ডোজ ৬ই এপ্রিল শেষ হয়ে যাবে। ৮ তারিখ থেকে কনফার্ম। আমাদের টিকা আছে। দ্বিতীয় ডোজ শুরু করার মতো টিকার পর্যাপ্ত মজুত আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত অসুবিধা হবে না। আমি কথা বলেছি। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, যে পরিমাণ ফাস্ট ডোজ দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তেলের দাম ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে বেশি বলে উনারা একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। ট্যাক্সের ক্ষেত্রে রিবেট (ছাড়) দিলে আমরা কম দামে বাজারে দিতে পারবো। রাজস্ব বোর্ড বলেছে, এই বিষয়ে তারা চিন্তা করবেন। মন্ত্রিসভা বলেছে, যে পরিমাণ রিবেট দেয়া হবে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করবে খুচরা মূল্যে সেই পরিমাণ প্রভাব যাতে পড়ে। বৈঠকে ‘খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে উৎসব ভাতাদি’ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব ধরনের ভাতা পাচ্ছেন। তবে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার উৎসব ভাতা, বিজয় দিবস ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পাচ্ছিলেন না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের আরো ভাতা দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদনের কথা জানান। মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ায় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১০ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব ভাতা, বাংলা নববর্ষে দুই হাজার এবং বিজয় দিবসে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বাংলা নববর্ষে দুই হাজার এবং বিজয় দিবসে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। একই সঙ্গে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচ হাজার টাকা করে বিজয় দিবসের ভাতা পাবেন।