নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করলো বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ টি টোয়েন্টিতে টাইগারদের ৬৫ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টানা তিন জয়ে ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিলো কিইউ শিবির।
অকল্যান্ডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে এসেছিল ১০ ওভারে। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুলে ৪ উইকেটে ১৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে শুরু থেকে ধুকতে থাকা বাংলাদেশ অল আউট ৯.৩ ওভারে, ৭৬ রানে। ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টি মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ৬ ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ।
১০ ওভারে করতে হবে ১৪২ রান। যা কঠিন টার্গেটই ছিল বাংলাদেশের। লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় টাইগাররা। দুটি চার হাকিয়ে আশা জাগিয়েও বিদায় নেন ওপেনার সৌম্য সরকার। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নেন টিম সাউদি। ৪ বলে ১০ রান সৌম্যর।
ব্যাট হাতে নামে অধিনায়ক লিটন দাস। টিকতে পারেননি। সাউদির ষষ্ঠ বলে সরাসরি বোল্ড। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মারেন গোল্ডেন ডাক। দলীয় ৩১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন বাংলাদেশের। দুটি ছক্কা ও এক চারে ১৩ বলে ১৯ রান করে ফেরেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। অ্যাস্টলের বলে তিনি ক্যাচ দেন চ্যাপম্যানের হাতে। ওভার তখন ৩.৩ ওভার।
অনেক দিন পর দলে নাজমুল হোসেন শান্ত। সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনিও। ৬ বলে ১ চারে ৮ রান করে তিনি অ্যাস্টলের বলে বোল্ড। ৪ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৩৭।
শেষ মারমুখি জুটি হিসেবে ছিলেন আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এই জুটিও জমেনি। ৬ বলে এক ছক্কায় ৮ রান করে অ্যাস্টলের শিকার আফিফ। একই ওভারে শূন্য রানে আউট মেহেদী হাসান। সপ্তম ওভারে মিলনের বলে বোল্ড পেসার শরিফুল ইসলাম। ৬০ রানে বাংলাদেশের নেই সাত উইকেট। ওভার তখন চলে ৬.৩ ওভার।
সাউদি ও অ্যাস্টলের পর এরপর উইকেটের দেখা পান লকি ফার্গুসন। দলীয় ৬৫ রানে তাসকিনকে করেন তিনি বোল্ড। ৪ বলে এক চারে তাসকিন করেন ৫ রান। আর সবার চেয়ে একটু বেশি সময় ক্রিজে থাকা মোসাদ্দেক হোসেনকে সাজঘরে ফেরত পাঠান কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। ৮.২ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ৭২। ৮ বলে এক চারে ১৩ রান করেন মোসাদ্দেক।
শেষ উইকেট জুটি ছিল রুবেল ও নাসুমের। এই জুটিতে হানা দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস প্যাক করে দেন ফিলিপস। ৪ বলে তিন রান করা নাসুমকে তিনি ক্যাচ বানান সাউদির হাতে। ৯.৩ ওভারে বাঙলাদেশ অল আউট ৭৬ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস থাকলো মাত্র ১৯ রানের, নাঈমের। সৌম্য ও মোসাদ্দেক ছাড়া বাকিদের মধ্যে কেউ স্পর্শ করতে পারেনি দুই অঙ্কের রান। নিউজিল্রান্ডের হয়ে অ্যাস্টল সর্বোচ্চ ৪টি, সাউদি নেন তিন উইকেট।
এর আগে ভেজা উইকেটে টস জিতে অনুমিতভাবে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলেন দুই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ফিন অ্যালেন। ছক্কা দিয়ে শুরু করেন গাপটিল। পাওয়ার প্লেতে তো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন দু’জন। তিন ওভারের পাওয়ার প্লেতে নিউজিল্যান্ড করে বিনা উইকেটে ৪৩ রান।
কিইউ সফরে ক্যাচ মিস বাংলাদেশের নিয়মিত ঘটনা। ব্যক্তিগত ১৯ রানে অ্যালেন পান দ্বিতীয় জীবন। শরিফুলের বলে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন অ্যালেন, মিড অফ থেকে পেছন দিকে ছুটে ক্যাচ নিতে পারেননি রুবেল হোসেন।
শুধু তাই নয় ব্যক্তিগত ২৯ রানে অ্যালেন দেন দ্বিতীয় ক্যাচ শরিফুলের ওভারে। ক্যাচ নিতে পারেননি সৌম্য কিংবা মোসাদ্দেক। ফিফটির পর আবার জীবন পান অ্যালেন। এবারের ক্যাচটি ছিল তুলনামুলক সহজ, লুফে নিতে পারেননি সৌম্য।
১৮ বলে অ্যালেন করেন ফিফটি। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এটি দ্রুততম ফিফটি। উদ্বেধানী জুটি বিচ্ছিন্ন হন ৮৫ রানে। ১৯ বলে ৪৪ রান করা গাপটিলকে আফিফের ক্যাচ বানান মেহেদী হাসান।
ঝড়ের বেগে রান তখনো থামেনি নিউজিল্যান্ডের। অ্যালেনের সঙ্গী তখন ফিলিপস। নবম ওভারে ৬ বলে দুই ছক্কায় ১৪ রান করা ফিলিপসকে বিদায় করেন শরিফুল। ক্যাচ নেন সৌম্য। ৮.২ ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান তখন ১২৩। ঝড় বইয়ে দেয়া অ্যালেন বিদায় নেন শেষ ওভারে তাসকিনের বলে। ক্যাচ নেন বদলি মিরাজ।
২৯ বলে ৭১ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে বিদায় নেন অ্যালেন। যা তার টি টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও তিনটি ছক্কার মার। ৬ বলে ১১ রানে শেষ বলে রান আউট হন ড্যারেল মিচেল। চ্যাপম্যান কোনো বল খেলার সুযোগ পাননি।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে তিনটি পরিবর্তন আসে। চোটের কারণে নেই নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জায়গা হারিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। একাদশে সুযোগ পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন ও পেসার রুবেল হোসেন।