বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সস্য প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিয়ে কথা বলেন। তুলে ধরেন তার রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনা-অঘটন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিন। ব্যারিস্টার মওদুদ সব সময় সরকার ঘেঁষা ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বার বার দল বদল করেছেন। দল বদলটাকে তিনি পছন্দ করতেন। ব্যক্তিগতভাবে মওদুদ মেধাবী ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশপ্রেম কাজে লাগালে তিনি দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন।
প্রধানমন্ত্রী শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে অন্য নেতাদের পাশাপাশি ব্যারিস্টার মওদুদের প্রসঙ্গও টানেন। সংসদে মওদুদের ওপর আনা শোক প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকজন ভদ্রলোকের কথা বলতেই হয়, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। যদিও কখনও ছাত্রলীগ করেননি। তিনি সব সময় একটু সরকার ঘেঁষাই ছিলেন। তবে ব্যারিস্টারি পাস করে ১৯৬৯ সালে যখন বাংলাদেশে আসেন, জানেন যে তিনি কবি জসীমউদ্দিনের মেয়ের জামাই বলে সব সময় তার প্রতি একটা সহানুভূতিটা ছিল, কিন্তু তার কিছু কিছু কাজ সময় সময় একটু ভিন্নধরনের ছিল। যার কারণে তেহাত্তর সালে তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। কারণ বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য সে পাচার করছিল। করি জসীমউদ্দিন সাহেব নিজে এসেছিলেন আমাদের বাসায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করলে তখন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন- বিএনপির হারুনুর রশীদের এমন বক্তব্য ও মওদুদ আহমদের জীবনীতে লেখা ওই দাবির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দি করা হয় তখন যে মামলা চলছিল, এখানে অবশ্য তার জীবনীতে (মওদুদ) লেখা আছে তিনি আইনজীবী ছিলেন। আসলে তিনি কোনও অ্যাপয়েনটেন্ড আইনজীবী ছিলেন না। তিনি ড. কামাল হোসেন সাহেবের সঙ্গে ঘুরতেন এবং বঙ্গবন্ধুর পিএস মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গেই ঘুরতেন। তিনি সেই গ্রুপের সঙ্গে সব সময় ছিলেন। বিশেষ করে ব্যরিস্টার আমিরুল ইসলামের সঙ্গে তার খুব ঘনিষ্টতা ছিল। সেই দুই জন সবসময় একসঙ্গেই চলতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে যখন আইয়ুব খান গোল টেবিল বৈঠক ডাকলো এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা মামলায় বন্দি অবস্থায় প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব হলো। তখন আমার মা এ বিষয়ে কঠিন খুব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মামলা প্রত্যাহার করে মুক্ত মানুষ হিসেবে যেন তিনি (বঙ্গবন্ধু) যান। তিনি প্যারোলে যাবেন না। এই তথ্যটি আমি মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার বাবাকে পৌঁছে দিয়েছিলাম। যেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল সেই ক্যান্টনমেন্টে ভেতরে। সেখানে আমাদের অনেক নেতা তখন উপস্থিত ছিলেন। তাজউদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া, আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদসহ আরও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং সেটাই তারা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি যখন আমার মায়ের বার্তাটা পৌঁছে দেই, অবশ্য বঙ্গবন্ধু নিজেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাকে মুক্ত মানুষ না করলে তিনি যাবেন না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মায়ের বার্তাটা পৌঁছে বাসায় ফিরে আসার পর দোতলার বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছি। আমিরুল ইসলাম ও মওদুদ আমার কাছে আসে। আমার কাছে এসে একথাই বলেছিল, এটা আমিরুল ইসলাম সাহেবই বলেছিলেন। আর মওদুদ তাকে সায় দিয়েছিলেন। বলেছিল যে- তুমি কেমন মেয়ে। তুমি চাও না তোমার বাবা কারাগার থেকে ফিরে আসুক? জবাবে আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ আমার বাবা সম্মান নিয়েই ফিরে আসবেন। আপনারা এ সমস্ত বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। এ ধরনের কিছু কিছু কাজ সব সময় তার (মওদুদ) করা…..। কিন্তু তিনি মুখে যাই বলুক আবার তার লেখাগুলোর মধ্যে অনেক সময় অনেক কন্ট্রোভার্শিয়াল কথা নিজের আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি লিখেছেন।’
মওদুদ আহমেদর দল বদলের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব সময় তিনি দল বদল করতে পছন্দ করতেন। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ, সেই ৬৯ সালে আমাদের সঙ্গে মিশে গেলো। পঁচাত্তরের পরে বিএনপিতে যোগ দিল। তিনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। জেনারেল এরশাদ সাহেব তাকে ক্ষমা করে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আইনমন্ত্রী করলো। আবার তিনি বিএনপিতে যোগদান করলেন। রাজনীতিতে বার বার দল বদল তার অভ্যাস ছিল, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তারপর বলবো, তিনি একটা ট্যালেন্টেড মানুষ ছিলেন। তার দেশপ্রেম কাজে লাগালে হয়তো দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন- এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক জানানোর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি মারা যাওয়ার পর আমি নিজে হাসনার সঙ্গে কথা বলি। কারণ হাসনার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। তার সঙ্গে আমার শোক বার্তাও জানিয়েছি।’