সফল নারী উদ্যোক্তা একজন সালমা

Slider লাইফস্টাইল


রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিবেদকঃ একবিংশ শতাব্দীর নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাঁধা পেরিয়ে নারীরা সমাজে মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে সর্বদা সচেষ্ট। তবে এর জন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে, হতে হবে আত্মনির্ভরশীল। আর স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। বর্তমান বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের অনেক নারী আজ তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সৃষ্টিশীল কর্মের সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

বর্তমান বিশ্ব ও মানব সম্প্রদায় আজ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত। কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) নামক রোগের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এই সময়ে মানুষের, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের নানাবিধ মানসিক সমস্যা তৈরির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি কর্মহীনতার জন্য পরিবারের আর্থিক উপার্জন কমে যাচ্ছে। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে, করোনার তৈরি হুমকি থেকে কর্মের নতুন সুযোগ খুঁজতে হবে। এ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে, আর এ ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা নিজেদের শিক্ষা, প্রতিভা ও মননশীলতা কাজে লাগিয়ে একেকজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন।

তেমনি একজন সফল উদ্যোক্তা নারী সালমা। গফরগাঁও উপজেলা পাগলা থানাধীন নিগুয়ারী মধ্য পাড়া গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত নারী সালমা আক্তার। এসএসসি পাশ করার পর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটি গ্রামের আব্দুল করিম শাহ দম্পতি কন্যা সালমার বিয়ে হয় গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী মধ্য পাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের পুত্র প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলামের সাথে। সালমা আক্তার শিক্ষা জীবন সমাপ্তি না ঘটিয়ে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন। অনেকের মতো চাকরির পিছনে না ছুটে তিনি গ্রামের শ্বশুরালয়ে ফিরে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা শশুরের জমির উপর গড়ে তুলেন জান্নাত-নুসরাত ডেইরি র্ফাম। গরু ও মৎস খামার শুরু করেন। চাকরি থেকে অবসর প্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা শশুর থেকে চার লক্ষ টাকা ও আরো প্রবাসী পিতার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা সহ মোট ৬ লক্ষ টাকার সহায়তা নিয়ে উচ্চশিক্ষিত নারী সালমা আক্তার ২০১০ সালে চারটি গরু কিনে খামার শুরু করেন। পাশাপাশি আরো এক ব্যক্তির জলাশয় ভাড়া নিয়ে দেশীয় জাতের মাছের চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক বছরে খামারটি বেশ উন্নত হয়েছে খামারটিতে বর্তমান ৩২ টি উন্নত জাতের গরু এবং মাছ চাষের জন্য জলাশয় বেড়ে চার গুণ অর্থাৎ ৩৫০ কাটা বিস্তৃত হয়েছে। স্বাধীন চেতা উদ্যোক্তা নারী সালমা আক্তারের এই খামারটিতে এখন এলাকার প্রায় শতাধিক দরিদ্র মানুষ কাজ করে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। আমাদের উত্তরোত্তর উন্নতি দেখে এলাকার অনেকেই এই কাজে হাত দিয়েছেন। সালমার উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের আদর্শ নাগরিক এবং দেশ-জাতির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অত্র এলাকার মোক্তার হোসেনের পরিচালনায় ও প্রচেষ্টায় তার ডেইরি ফার্ম ও মৎস খামার এখন কোটি টাকা সম্পদে পরিণত হয়েছে। খামারটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে রকমারী ফল ও ফুলের বাগান যা দেখে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছেন। অনন্য ও সফল উদ্যোক্তা বেসরকারিভাবে পুরস্কারে ভূষিত করে অধিক উৎসাহ দেয়ার প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে সাধারণ এলাকাবাসী মনে করেন। তবেই দেশে উচ্চ শিক্ষিত উদ্যোক্তা সংখ্যা বেড়ে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *