আহমেদ কবীর কিশোর। ব্যঙ্গ ও রম্যরচয়িতা। কার্টুনিস্ট হিসেবে বেশি পরিচিত। দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তার ছোট পরিবার। ১০ মাস ধরে বড় কষ্টে আছে সেই পরিবারটি। যার উপার্জনে চলতো চারজনের সংসার সেই মানুষটি কারাবন্দি। স্বজনদের সাহায্যে দিন পার করছেন কিশোরের স্ত্রী-সন্তান। সঙ্গে আছে কিশোরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা উদ্বেগ।
এই অবস্থায় আজ বড় আশা নিয়ে তারা তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে। উচ্চ আদালতে কিশোরের জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা আশা করছেন এতদিন জামিন আটকে থাকলেও এবার হয়তো জামিন মিলবে।
কারাগারে পায়ে ইনফেকশন, চোখে স্পষ্ট না দেখতে পাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন কিশোর- এমনটিই দাবি করেছেন তার স্বজনরা। সমপ্রতি মানবজমিনের সঙ্গে কথা হয় কিশোরের ভাই এবং স্বজনদের। কার্টুনিস্ট কিশোরের বড় ভাই সাংবাদিক ও অভিনেতা আহসান কবীর বলেন, সাত ভাইবোনের মধ্যে কিশোর ষষ্ঠ। ছোটবেলা থেকেই ফুল, পাখি, প্রকৃতি নিয়ে আঁকাআঁকি এবং লেখালেখির শখ ছিল তার। বইয়ের অলঙ্করণ করার সুবাদে প্রয়াত মুশতাকের সঙ্গে কিশোরের পরিচয় হয়।
লিখেছেন ভালোবাসার চার গল্প, বাংলাদেশের কার্টুন- কার্টুনের বাংলাদেশ এবং দেয়ালের গল্পসহ একাধিক বই। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনায়। পড়ালেখা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। পড়ালেখা শেষ না করেই যোগ দেন সামরিক কর্মকর্তা পদে। সেখানেও খুব বেশিদিন থিতু হতে পারেননি। এরপর কার্টুন আঁকাআঁকি এবং বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি নেন। এশিয়াটিক, বিটপী, অ্যাডকম থেকে শুরু করে দেশের কমবেশি সবগুলো বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ কাজ করতেন প্রাণ আরএফএল-এর ক্রিয়েটিভ ডিপার্টমেন্টে। এ ছাড়া লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। একাধিক জাতীয় দৈনিকে কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন অনেকদিন। ২০০৫ সালে ‘উন্মাদ কার্টুনিস্ট পদক’ লাভ করেন। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কার্টুন প্রতিযোগিতায়।
কিশোরের পারিবারিক সূত্র জানায়, কারাবন্দি হওয়ার পর কিশোরের সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয় গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি। এরপর আর দেখা হয়নি। সর্বশেষ তার রিমান্ড আবেদন করলে আদালতে হাজির করা হয়নি। কিশোরের শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। নতুন করে কিছু ওষুধ পাঠাতে বলেছেন। কানের পর্দা ফেটে গিয়েছিল। সেখানে রক্ত ও পুঁজ জমেছিল বলে এখন তিনি একটি কানে শুনতে পান না। বাঁ-পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারেন না। পায়ে ইনফেকশন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাবন্দি কিশোরের আগে এই শারীরিক সমস্যাগুলো ছিল না। আগে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। কিন্তু এতটা খারাপ অবস্থা ছিল না। গত বছরের ৩রা মে রাতে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং ৬ই মে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মাঝের এই তিন থেকে চারদিনে তার উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে স্বজনদের অভিযোগ। সর্বশেষ কিশোর তার মেজ বোনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। জানিয়েছেন, তার রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করা হবে। এটা যেন পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়। তাদেরকে আদালতে থাকতে বলেন। এ ছাড়া কি কি লাগবে, জামিনের কি অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে কথা হয় সর্বশেষ।
আজ কার্টুনিস্ট কিশোরের জামিন বিষয়ে আদেশ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের জামিন বিষয়ে আজ আদেশের জন্য রয়েছে হাইকোর্টের কার্যতালিকায়। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে আদেশ দেবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। গত সোমবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। একইসঙ্গে মামলার অপর আসামি কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু বিষয়ে হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।