লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং গ্রেপ্তার নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল সকাল ১১টার দিকে সংগঠনটির প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে রওনা দিলে শিক্ষা ভবনে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে রওনা দেন। তারা সচিবালয়ের সামনের ৩ নম্বর গেটের সামনে গেলে পুলিশ সেখানে আটকে দেয়। সেখানেই ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন যে, দুইদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকার দাবি না মানলে তারা হরতালের মতো কর্মসূচিরও ঘোষণা দিবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, ক্ষমতাসীনেরা ছাত্র আন্দোলনকে ভয় পায়।
মেহেনতি মানুষের সংগ্রামকে ভয় পায়। অতীতে ছাত্র আন্দোলনগুলোতে ক্ষমতাসীন সরকার তাদের হাতুড়ি বাহিনী দিয়ে কী নির্মমভাবে হামলা করেছে তা দেশবাসী অবগত আছেন। তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে পুলিশ বাহিনী আমাদের মশাল মিছিলে কীভাবে হামলা করে আমাদের আহত ও সহকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে তা দেশবাসী মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছে। আমরা মুশতাকের হত্যার তদন্ত ও দোষীদের বিচার ছাড়া রাজপথ ছাড়বো না।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, সরকার কর্তৃক প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি বর্বর, সংবিধানবিরোধী, অমানবিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। এ আইন কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। তিনি আরো বলেন, সরকার তার মসনদ রক্ষা করার জন্য এ আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু, দেশের সকল শ্রেণি-পেশা ও মেহেনতি মানুষ এ আইনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জেলের তালা ভেঙে আমরা বন্দি কিশোরকে মুক্ত করবো। তিনি অবিলম্বে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ৮ নেতাকর্মীর দ্রুত মুক্তি দাবি করেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স বলেন, এ মহামারিতে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে সরকার। লেখক মুশতাকের অপরাধ কি ছিল? কি অপরাধে তাকে মরতে হলো? তিনি আরো বলেন, মুশতাক শুধু বর্তমান বুর্জোয়াদের কিছু ভুল তুলে ধরে সমালোচনা করেছেন। রাষ্ট্রকে জনগণের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আরো সচেতন হতে বলেছিলেন। এ কারণে তাকে কারাগারে মরতে হলো। আমরা এ অন্যায় বরদাশত করবো না। লড়াই-সংগ্রাম করে মুশতাকের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি আদায় করবো।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইকবাল কবীর বলেন, কারাগারে সামনে লেখা আছে যে, রাখিবো নিরাপদ-দেখাবো আলোর পথ। কিন্তু, কারা কর্তৃপক্ষ মুশতাককে কী আলো দেখালো। কারাগারে তার যে মৃত্যু হয়েছে তা মৃত্যু বলা যায় না। এটা হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হতে হবে। নইলে এ গ্লানি বহন করতে হবে জাতিকে সারাজীবন।
অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর শাখার নেতা তাসিন মল্লিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্মসূচি শেষে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উদ্যোগে মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা তাদের এখানে (ডিপিডিসি ভবনের সামনে) থামার জন্য অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। খুব শান্তিপূর্ণভাবে তারা তাদের দাবি-দাওয়াগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। কোনো ধরনের কোনো সংঘর্ষ ছিল না।
তিনি আরো বলেন, পথিমধ্যে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের সচিবালয় অভিমুখে না গিয়ে অন্য কোনো দিকে তারা সমাবেশ করতে পারেন কিনা, তা বলা হয়েছিল। কোথাও তাদের কোনো বাধা দেয়া হয়নি। আমাদের অনুরোধ রেখে তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করে গেছেন। তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।
রাজপথেই সব দাবির ফয়সালা হবে: নুর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, দেশের ছাত্র-জনতা যে দাবি তুলেছে তা মেনে নিতে হবে। দাবি না মানলে রাজপথেই ফয়সালা হবে। গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত ছাত্র অধিকার পরিষদের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। নুরুল হক নুর বলেন, মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে হবে। মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে ছাত্রসমাজের আন্দোলনে পুলিশের মারমুখী ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে এডিসি ছাত্রদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার সব ছাত্রদের মুক্তি দিতে হবে। নিঃশর্তভাবে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। কারাগারে সব মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। অবিলম্বে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। একইসঙ্গে দেশের চলমান সংকট নিরসনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। ভোটারবিহীন কোনো সরকারের সময়ে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তামাশার শামিল। নুরুল হক নুর ৩রা মার্চ নাগরিক সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচিতে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা বক্তব্য রাখেন।