আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসলে তা তদন্ত করার জন্য স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রোববার সুপ্রিম কোর্টের ১০২ জন আইনজীবীর পক্ষে এডভোকেট মো. শিশির মনির এ রিট করেন। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)কে বিবাদী করা হয়েছে। রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন- এডভোকেট মো. আসাদ উদ্দিন, ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ, ব্যারিস্টার মো. সাইফুল ইসলাম, এডভোকেট শিকদার মাহমুদুর, শ্যাম সুন্দর দাস, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম, এডভোকেট মো. মোর্শেদ মীর, জামিলুর রহমান খান, শেখ নাসের ওয়াহেদ (সিমন), মো. আল-আমিন, আল রেজা মো. আমির, ইমরুল কায়েস, এডভোকেট গোলাম সারোয়ার, মো. শাহাবুদ্দিন খান (লার্জ), মো. দুলাল মিয়া, মো. জাকির হায়দার, মো. আব্দুল আলীম, মো. হুমায়ুন কবির, জি এম মুজাহিদুর রহমান, মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ।
রিটে তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সংবলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেবেন। রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু ও নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি ও হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, জমি দখল ও সম্পত্তি বিনষ্টকরণ, মাদক ব্যবসা ও উদ্ধারকৃত মাদক আত্মসাৎ, আটক বাণিজ্য, অপরাধীদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া, মামলা নিতে গড়িমসি ও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ, মিথ্যা ও পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি, তদন্তে গাফিলতি, হয়রানি ও ঘুষ নেয়া, সাংবাদিক নির্যাতন, কর্তব্যে অবহেলা, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্টকরণ ও আসামিদের নাম বাদ দেয়া এবং নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে দুর্নীতিসহ মোট ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘তদন্ত’ হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার।
বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সেই খসড়া অধ্যাদেশ আজও আইনে পরিণত হয়নি।