খুলনাঃ খুলনায় আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, বর্তমান সরকারকে আর সময় দেয়া যাবে না এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথের বিকল্প নেই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে খুলনা মহানগরে এ সমাবেশ করে বিএনপি। খুলনা মহানগরের দুই স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অনুমতি না দেয়ায় শহরের কেডি ঘোষ রোডস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর আগে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে মহানগরীর প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ সময় সমাবেশ স্থলে আসার সময় নেতাকর্মীদের বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। শত বাধা বিপত্তির পরেও সমাবেশে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। বিকাল ৩টায় সমাবেশ শুরুর আগেই পুরো এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। এর আগে সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার সমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগ দেন সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
পথিমধ্যে তার গাড়ি বহরে পুলিশ এবং সরকার পক্ষের লোকেরা বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, একটা বিষয় আমার কাছে খুবই খারাপ লাগে যখন অনেকেই বলেন আমরা শেখ হাসিনার কাছে অনেক কিছু দাবি করি, ভিক্ষা করি। আরে ভাই আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার দল করি। আমরা কারো কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাই না, আমরা আমাদের সবকিছু আদায় করে নেই। রাজপথে আমাদের সবকিছু আদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে মিয়ানমারে মানুষ সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পুলিশের গুলির সামনে মাথা নত করছে না তারা। যদি এখন কথা না বলি তাহলে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশও এই সরকার পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে। এ সরকারের আর বেশি দিন নাই। এদেশের যত অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে সরকারের লোকেরা সব করছে। তাই আসুন এই অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এই সমাজে থাকতে হলে এই সমাজের নিয়ম মানতে হবে। উল্টাপাল্টা কোন কিছু করে রেহাই পাওয়া যাবে না। পথে পথে যেখানেই আটকানো হয়েছে, যত পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম যে, কেন আপনারা এরকম করছেন? বলছে আমি জানি না, উপর মহলের নির্দেশ। দ্বিতীয় জায়গায় এসে জিজ্ঞেস করলাম কেন এরকম করছেন? বলছে আমি জানিনা, উপরের নির্দেশ। আরে ভাই কত উপরে? সবার উপরে তো আল্লাহর আরশ।
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এখন যে দেশ আমরা দেখছি এর জন্য কি এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল? এ দেশ লুটেরারা শেষ করে দিয়েছে। দেশে হায়েনার রাজত্ব কায়েম করেছে। এভাবে আর একটা দেশ চলতে পারে না। দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাই আর দেরি নয়। রাজপথেই আমাদের আসল ফায়সালা করতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকে এই প্রোগ্রামের নমুনা দেখে প্রমাণিত হয় দেশে কতোটা পুলিশি শাসনতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এই দেশে এখন আমাদদের ভোটের অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। কিছু বললেই মামলা হামলা গুম, খুন করা হয়। এই অন্যায় অত্যাচার আর মেনে নেয়া যায় না। সারাদেশে আমাদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর আমরা এই বলদ মার্কা নির্বাচন কমিশন দেখতে চাই না। আমরা আরেকটি নিরপেক্ষ কমিশন এবং তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আজকের এই সভা পণ্ড করার জন্য সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের সকল নেতাকর্মীদের পদে পদে বাধা দিয়েছে। অনেক হয়েছে। আর না। আমরা আর কোন বাধা মানবো না। এই দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। আমরা কারো দাসত্ব মানবো না। তাই আসুন সকলে মিলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সারোয়ার, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমি, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, বিএনপির সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমূখ।