প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। পলাশ আর শিমুলের মেলা বসেছে গাছে গাছে। কৃষ্ণচূড়ার ডালে আগুনলাগা রঙ। সব কিছুই জানান দিচ্ছে আজ পহেলা ফাল্গুন। মাঘের জড়তা ভেঙে এসে গেছে ঋতুরাজ বসন্ত। একই দিনে উদযাপিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। চারদিক ছড়াবে তাই লাল-বাসন্তী।
বসন্তকে নিয়ে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীদের ভালো লাগা ও ভালোবাসা অশেষ। তাই ঋতুরাজের আগমনে গলা ছেড়ে শিল্পী গেয়েছেন- ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এখন দারুণ মাস/আমি জেনে গেছি তুমি আসিবে না ফিরে/মিটিবে না পিয়াস।’ কিংবা ‘বসন্ত আজ আসলো ধরায়/ফুল ফুটেছে বনে বনে/শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে…।’
ফাল্গুনী হাওয়া উদাস করে প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলবে ঋতুরাজ। মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে বসন্ত ও ভালোবাসায়। বাসন্তী আবীরের সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় লাল গোলাপের টায়রায় তারুণ্যের ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠবে শৈল্পিকতা। আবহমান বাংলার বাসন্তীদের হৃদয়ে তরুণরাও ধরা দেবে একরাশ ফাল্গুনী সাজে। লাল কিংবা হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীর বাঁধভাঙা উল্লাসে আজ নতুনভাবে সেজে উঠবে দেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা, শিল্পকলা একাডেমি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেন, বেইলি রোডের ফাস্টফুডের দোকান, ধানমন্ডি লেক, রবীন্দ্র সরোবরে নামবে ভালোবাসা ও বসন্তের মিছিল। বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে কপোত-কপোতী। ফুল, কার্ড, চকোলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত ক্ষুদে বার্তায় ভরে যাবে মুঠোফোনের মেসেজ বক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসআপেও ছড়িয়ে যাবে পরাণের গহিনের উষ্ণতা। তারুণ্যের বাঁধভাঙা জোয়ারে বাঁধনহারার দেশে ছুটে চলবে প্রেমের তরীতে ভেসে চলা যাত্রীরা। সারাদেশের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে আজ বসন্ত ও ভালোবাসাকে উদযাপন করবে। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনা দুর্যোগের কারণে এবারের আয়োজন থাকবে স্বল্প পরিসরের ও সীমিত সময়ের জন্য।
এদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর এবার একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস। একদিনে দুটি ফুলনির্ভর উৎসব হওয়ায় কয়েক দিন আগেই ফুলে ফুলে ভরে গেছে দেশের সব পাইকারি বাজার। যেখানে চোখ রাঙাচ্ছে ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জের ফুলচাষিদের উৎপাদিত ফুলও। চাষিরা জানান, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে সারাদেশের ফুলের চাহিদা থাকায় গত কয়েক দিন বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে তাদের। আগে আগেই ফুল পাঠিয়েছেন ঢাকার শাহাবাগ, আগারগাঁও; চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় বাজার এবং ফেনী, দিনাজপুর, রংপুর, কুমিল্লা, নওগাঁসহ দেশের বড় বড় শহরের পাইকারি বাজারগুলোয়। তবে করোনার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের চাহিদাটা একটু কম বলেই জানিয়েছেন তারা।