কারাগারের চৌহদ্দি থেকে মুক্তি পেয়ে এখন ‘গৃহবন্দী’ অবস্থায় দিন পার করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ‘শর্তযুক্ত’ মুক্তির পর থেকেই গুলশানের বাসভবনে অন্তরীণ রয়েছেন তিনি।
সরকারের তরফ থেকে বেঁধে দেয়া মুক্তির শর্তে বলা হয়েছিল, নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া বেগম জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন। কিন্তু বিদেশে যেতে পারবেন না। মুক্তির শর্তে বেগম জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারবেন কি না, এমন কথা ‘প্রকাশ্যে’ বলা হয়নি।
প্রায় ১১ মাস ধরে কারাগারের বাইরে রয়েছেন ৭৫ বছর বয়সী অসুস্থ খালেদা জিয়া। এই পুরো সময়টাই গুলশানের ফিরোজায় একান্ত জীবনযাপন করছেন তিনি। দলীয় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। এমনকি কোনো আলাপচারিতায়ও ছিলেন না। কদাচিৎ দলের কাউকে কাউকে সাক্ষাৎ দিলেও করোনার কারণে তা হয়েছে সতর্কতা মেনেই।
বেগম জিয়ার মুক্তির এই অবস্থাকে ‘গৃহবন্দী’ হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্ত নন। শি ইজ নট ফ্রি। বলা হচ্ছে, উনার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তার ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়। পার্থক্যটা হচ্ছে, শুধু হাসপাতাল থেকে তাকে তার বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওখানে তিনি হোমলি পরিবেশের মধ্যে আছেন। এটাকে সোজা কথায় বললে বলা যায়, গৃহে অন্তরীণ করা।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে তিন বছর ধরে বন্দী করা হয়েছে। গত মার্চে কারাগার থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হলেও তিনি মূলত গৃহবন্দী। অগণতান্ত্রিক সরকারের দোসররা কখনই গণতান্ত্রিক শক্তির মিত্র হতে পারে না বলেই বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে।’
দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, একান্ত পারিবারিক পরিমণ্ডলেই দিন কাটছে বেগম জিয়ার। শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝখানে কিছুটা উন্নতির কথাও জানিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তবে করোনার কারণে বেগম জিয়ার সঠিক কোনো চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি।
২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দী থাকার পর গত বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরো এক দফায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার হাত এবং পায়ের ব্যথা তেমন কোনো উন্নতি নেই। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার দেখভাল করেন। এ ছাড়া দু’জন নার্স রয়েছেন তারাও সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আপাতত খালেদা জিয়ার চিকিৎসার মূল দায়িত্বে আছেন লন্ডনে অবস্থানরত পুত্রবধূ ডা: জোবায়দা রহমান। তার পরামর্শেই মূলত খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং ডা: মামুন নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। ডা: মামুন প্রায়ই তার শরীরিক অবস্থা জানতে বাসায় যান।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন খালেদা জিয়া। তার মেরুদণ্ড, বাম হাত ও ঘাড়ের দিকে মাঝে মধ্যে শক্ত হয়ে যায়। দুই হাঁটু প্রতিস্থাপন করা আছে। তিনি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান। বাম চোখেও একটু সমস্যা রয়েছে তার।
খালেদা জিয়ার অফিস সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমান ও দুই পুত্রবধূ এবং নাতনীদের সাথে কথা বলে সময় কাটান। এ ছাড়া পত্রিকা ও টিভি দেখে বাসায় সময় কাটান তিনি। দলের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করার সুযোগ পান না।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে চাইলে চিকিৎসক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। আগের মতো আছে। পরামর্শ মোতাবেক রুটিন ওষুধগুলো খাচ্ছেন তিনি। বাসা থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রোপার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে একটা সেন্টারে (হাসপাতাল) নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, করোনার কারণে খালেদা জিয়াকে আপাতত বিদেশে পাঠানোর চিন্তাও নেই বিএনপির।
কর্মসূচি : আজ ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের তিন বছর। এই দিন করাবন্দিত্বের প্রতিবাদে বিএনপি ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া পাঁচ বছরের সাজায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান।