এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে ন্যূনতম স্কোর করা সত্ত্বেও ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ নাও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সভা করেছেন। সেখান থেকে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে।
এর আগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম যে স্কোর চাওয়া হয়েছে সেটা পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যেত। কিন্তু বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের আগে পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হবে। সেই আবেদন থেকে যাচাই-বাছাই করা নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
অর্থাৎ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধু আবেদন করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ এবার থাকছে না। বৈজ্ঞানিক উপায়ে এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যেসব শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় টিকবেন সেটা মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হবে। পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে কোনো ফি লাগবে না। আবেদনে টিকে গেলে ৫০০ টাকা ফি পরিশোধ করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন ভর্তিচ্ছুরা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত আসে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে যতজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া সম্ভব ঠিক ততজন শিক্ষার্থীকে মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আবেদনের সুযোগ দেয়া হবে।
২০টি বিশ্ববিদ্যালয়েই কেন্দ্র থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো কেন্দ্র পছন্দ করতে পারবেন।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে এক লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে ধারণা করা হলেও, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়ানোর ব্যাপারে ভাবছে, যেন আবেদনকৃত সব শিক্ষার্থীকেই পরীক্ষার সুযোগ দেয়া যায়।
এর মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ২৩ হাজার আসনে ভর্তির সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।
এবার যেহেতু এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে তাই তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ বাছাই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সবাই তাদের পছন্দ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষায় সবার ভর্তির সুযোগ রয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসির) সচিব ফেরদৌস জামান।
তিনি জানান, বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি, কারিগরি, জাতীয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর লক্ষ দেশের বাইরে পড়াশোনা করা। তাই এই ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ হারানো মানে এই নয় যে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারাতে হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শ্যামলী আকবর বলেছেন, জেলা উপজেলা পর্যায়ের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের মান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহী হয়।
যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের পর শিক্ষার্থীদের যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে যেতে হবে সেগুলো হলো: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আবেদনের যোগ্যতা:
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে উত্তীর্ণ এইচএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীরা এই ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এসএসসি ও এইচএসসি কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩- এর নিচে থাকলে আবেদন করা যাবে না।
মানবিক বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৬ থাকতে হবে। ব্যবসায়ে শিক্ষা বিভাগের জন্য মোট জিপিএ-৬.৫ এবং বিজ্ঞানে মোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য আলাদা তিনটি পরীক্ষা হবে। এই তিনটি শাখার পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ গ্রুপে পরীক্ষা দিয়েই বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে। সেভাবে বিষয়ভিত্তিক আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ আবেদনে টিকে যাওয়া শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
ভর্তি পরীক্ষায় মান-বণ্টন:
এবারে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সব পরীক্ষাকেন্দ্রে একযোগে ১০০ নম্বরের লিখিত ও এমসিকিউ পদ্ধতিতে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষার কথা রয়েছে।
মানবিক বিভাগের পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে।
এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অর্গানাইজেশন ও ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে।
এর মধ্যে, হিসাববিজ্ঞানে ২৫ নম্বর, ব্যবসায় গঠন ও ব্যবস্থাপনায় ২৫, ভাষা (বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর) ও আইসিটিতে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। ভাষা (বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর), রসায়ন-২০, পদার্থ বিজ্ঞান -২০ এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে যেকোনো দুটি বিষয়ে মোট ৪০ নম্বরে পরীক্ষা দিতে হবে।
প্রত্যেকেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি স্কোর পাবেন এবং ওই ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এছাড়া এবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটকে ছাড়াই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।
মেডিক্যাল কলেজ ও বুয়েটের পরই তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি