মিয়ানমারের নাটকীয় অভ্যুত্থান সমগ্র বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হলেও, অন্ধকারে রয়েছে দেশটির মানুষ। গণতান্ত্রিক শাসককে উৎখাতের পর থেকেই দেশের একটি বড় অংশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও। বৃহসপতিবার দেশটির তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ ঘোষণা করেছে। অনলাইনে গণতন্ত্রপন্থিদের কার্যক্রম থামাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তাকে এসব অভিযোগে আগামী ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তবে সোমবার তাকে ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে সেনারা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এরইমধ্যে অভ্যুত্থানের নেতা সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ১১ সদস্যকে নিয়োগ দিয়েছে। এরা সবাই সেনাসদস্য।
৮ই নভেম্বর মিয়ানমারে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে শতকরা ৮৩ ভাগেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয় অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু নির্বাচনের ফল মানতে নারাজ সেনারা। সেনাবাহিনীর অভিযোগ জালিয়াতি হয়েছে নির্বাচনে। অনেকে তাদের এ অভিযোগকে ‘ট্রাম্পিয়ান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যেমন প্রমাণ ছাড়া ভোট জালিয়াতির একগুঁয়ে অভিযোগ করে আসছেন, ঠিক একই রকম কাণ্ড ঘটাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা।
এদিকে, মিয়ানমারজুড়ে ইন্টারনেট সেবা ও সংবাদ প্রচার কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ফেসবুক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, জনগণ যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দেশের বড় একটি অংশের মোবাইল যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে নজিরবিহীন ফিল্টারিং চলছে। দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চালু রয়েছে শুধু সামরিক বাহিনী পরিচালিত টিভি নেটওয়ার্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্লক করে দিতে টেলিযোগাযোগ বিষয়ক কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে সামরিক জান্তা। ফলে বৃহসপতিবার সকাল থেকেই সেখানে ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছেন না কেউ। গত কয়েকদিনে এই ফেসবুক ব্যবহার করে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করছিলেন নেতাকর্মীরা।