সাংবিধানিক বিকল্প ব্যবস্থা প্রয়োগ হচ্ছে?

Slider সারাদেশ

57207_kh

প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই দিনে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ দুই নেতার এ বক্তব্য নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সর্বশেষ বিকল্প ব্যবস্থা বা ক্ষমতার প্রয়োগ হচ্ছে জরুরি অবস্থা ঘোষণা।
গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ১৪ দল আয়োজিত হরতাল-অবরোধে নিহত ব্যক্তিদের গায়েবানা জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। একই দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, প্রয়োজনে সরকার সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পৃথক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে এই বক্তব্য নিছক বিরোধীদের জন্য হুমকি নয় বলে মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগেরই একাধিক নেতা।
সরকারের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও আনসার দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে সংবিধান অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার এখনো বিশ্বাস করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে। তবে কাল সোমবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তাই সরকার বাড়তি চাপের মধ্যে পড়েছে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি অবস্থা জারির প্রশ্নই ওঠে না। কিছু বিচ্ছিন্ন ও সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলেও জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও সেই ব্যবস্থার ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি দেখছে। তবে ১৪ দলের পক্ষ থেকে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে।
সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থা কী, জানতে চাইলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চান না। যতটুকু বলা যায় ততটুকুই তিনি বলেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার কথা উল্লেখ আছে। সংবিধান থেকে এ বিষয়ে ধারণা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সংবিধানের ১৪১(ক) ধারায় বলা আছে, অভ্যন্তরীণ গোলযোগে বাংলাদেশ বা এর যেকোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন হলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতি অনধিক ১২০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এ সময় সংবিধানের ছয়টি অনুচ্ছেদের বিধান এবং মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগ বলতে ওনারা কী বুঝিয়েছেন, তা বলতে পারব না। তবে এখনকার চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চাইলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হবে। এতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়বে।’
প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থার ধরন কী হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁর জানা নেই। যাঁরা বলেছেন তাঁদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে তিনি পরে বলতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *