যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেন যখন ওয়াশিংটনে শপথ নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছিলেন তখন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর ক্লাব হাউসে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্থিরতায় ভুগছিলেন। তিনি এসময় সিনেটে অভিশংসন ঠেকাতে ধর্না দিচ্ছিলেন বিভিন্ন জায়গায়। বুধবার দুপুরে ফ্লোরিডায় পৌঁছে অস্থির ট্রাম্প চারদিকে ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন। এসব ফোন কলের বেশিরভাগই ছিল রিপাবলিকান দলীয় বলয়ের লোকজন ও একান্ত অনুগামীদের মধ্যে সীমাবব্ধ। এ সময় ট্রাম্প তাদের কাছে জানতে চান সিনেটের অভিশংসনে কে বা কারা তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন। দিলে কীভাবে এদের আটকানো যায়। এ নিয়ে অন্যতম প্রভাবশালী মার্কিন ডেইলি বিস্টের বরাতে বিজনেস ইনসাইডার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অভিশংসনের খড়গ নিয়ে এখন খুবই শঙ্কিত। ওয়াশিংটন ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তার চেহারায় চিন্তার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
জয়েন্ট বেস এ্যান্ড্রোসে তার শখের সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানাননি তারই নিয়োগ দেয়া জেনারেলরা। পেন্টাগন তার অনুরোধ মুখের উপর প্রত্যাখান করে। বিষ খেয়ে বিষ হজম করলেও ট্রাম্প কোনো উচ্চবাচ্য করেননি এ নিয়ে। তিনি বুঝে যান তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। তাকে সকলেই উপেক্ষা করছে এটি তিনি উপলব্ধি করেন। তার পেছনে আর কেউ নেই এটা বুঝেই তিনি এখন তাঁর ও নিজের পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সিনেটে অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে হলে এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৭ ভোট প্রয়োজন। বর্তমান সিনেটে আসন সংখ্যা সমান সমান দুপক্ষের। অর্থাৎ ৫০ ডেমোক্রেট ও ৫০ রিপাবলিকান পার্টির।
অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে হলে রিপাবলিকান শিবিরের ১৭টি ভোট দরকার হবে ডেমোক্র্যাটদের। রিপাবলিকান সিনেটর মিট রামনি, বেন সেসি ও লিসা মোরকায়স্কি ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব থাকলে তার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন এমনটা বলেননি এখন পর্যন্ত। সিনেটের বর্তমান মাইনোরিটি লিডার রিপাবলিকান মিচ ম্যাককনেল এপিকে বলেছেন, তিনি নিজের ভোটের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে ম্যাককনেল তার সহকর্মীদের বলেছেন তারা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো পক্ষে ভোট দিতে পারেন। মিচ ম্যাককনেল বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে স্বস্ত্রীক যোগদানে আরো অধিক মাত্রায় চিন্তিত হয়ে পড়েন ট্রাম্প । ম্যাককনেলের স্ত্রী ট্রাম্প প্রশাসনের ট্রান্সপোর্টেশন মন্ত্রী ইলাইন চাও ক্যপিটল হিলে হামলার প্রতিবাদে ট্রাম্পের মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ
করেন পরের দিন।
তবে ২১ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। ট্রাম্প চাইছেন যে কোনো প্রকারে যেনো তার বিরোধীদের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দানে বিরত রাখা যায়। ট্রাম্পের নিজের নতুন দল করার ঘোষনা পার্টি এবং রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দকে চাপে রাখার একট কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে। সিনেটে অভিশংসিত হলে ট্রাম্পের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়বে। আসছে দিনে তিনি প্রেসিডেন্টসহ কোন পাবলিক পদ অলংকৃত করতে যেমন অযোগ্য হবেন তেমনি বেড়ে যাবে জেল জরিমানার ঝুঁকি। তাই যে কোনো একটি উপায় খুঁজে বের করতে এই লবিং। দলের অনেক প্রভাবশালী আইন প্রণেতাকে সুপারিশ করছেন তাকে রক্ষার। অনুরোধ জানিয়েছেন এ বিষয়ে একটি কৌশল খুঁজে বের করতে। অন্তত আম গেলেও ছালা যাতে রক্ষা হয়।
ট্রাম্প তার শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে সিনেটের অভিশংসন শুনানিতে আইনজীবী হিসাবে কাকে নিয়োগ দেয়া যায় এবিষয়ে শলা পরামর্শ করেন। এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানার চেষ্টা করেন। ট্রাম্পের ব্যাক্তিগত প্রধান আইনজীবী রুডি জুলিয়ানী প্রথমে সিনেটে অভিশংসনে ট্রাম্পকে প্রতিনিধিত্ব করবেন বললেও এখন বলছেন অন্য কথা। জুলিয়ানী এখন ক্যাপিটল ঘটনার সাক্ষী হিসাবে নিজেকে বিবেচনা করছেন।
উল্লেখ্য, সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে ইতিমধ্যে হাউসে অভিশংসনের প্রস্তাব পাশ করা হয়ছে। এই প্রস্তাব এখন সিনেটের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শুনানির অপেক্ষায় আছে।