হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাট জেলায় তামাকের চাষ হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। এই জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা উপজেলায় তামাক চাষ উদ্বুদ্ধ করণের জন্য কম্পানিগুলো তাদের শাখা খুলেছে। এখান থেকেই কম্পানিগুলো তাদের বিষদৃষ্টি পাশের জেলাগুলোতে সম্প্রসারণ করেছে। কম্পানির ফাঁদে পড়ে উঠোনবাড়িতেও তামাকের চাষ হচ্ছে।
খোদ কৃষি বিভাগের একটি একটি সুত্র বলছে, তামাক চাষ বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি বাধা প্রদান করা হচ্ছে না। তামাকের সাথে আমদানি-রফতানি জড়িত। এখানে রাজস্বের একটি বিষয় জড়িত।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা এলাকার কৃষক হযরত আলী বলেন, এখন তামাকের ভালো ফলন হচ্ছে। এখন সব থেকে লাভজনক ফসল তামাক। আগেই কম্পানি খরচ দেয়। যার ফলে তারা তামাক চাষ করছেন। তারা শ্রমবাজার নিরুপণ করেননি। তামাক চাষে যে শ্রম ব্যয় হয়, সে তুলোনায় লাভ যে কম,তারা তা হিসেব করেননি।
আব্দুল করিম জানান, তাদের অঞ্চলে তামাক চাষ ছিলই না। গত ৪ থেকে ৫ বছর থেকে তামাকের চাষ হচ্ছে। দিনকে দিন তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছে মানুষ।
নারায়ন চন্দ্র বর্মণ (প্রাণিবিদ্যা) জানান, তামাক চাষ শুধু পরিবেশের ক্ষতিই করে না, যে ঘরে তামাক রাখা হয়, সেই ঘরে এ্যাজমা বা এ জাতীয় কোনো রোগী থাকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তামাক যে কোনো প্রাণির জন্যই ক্ষতিকর। তামাক পাতা শুকানোর পরে যে ধুলো থাকে, সেখান থেকে লিভার সিরোসিস, সিলোকোসিলের মত মারাত্মক মরণব্যাধি হতে পারে। যে রোগে মৃত্যু নিশ্চিত।
রংপুরের গঙ্গাচরা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, বরাবরের মতো তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অন্যান্য ফসলে আগ্রহী করা হচ্ছে। এই সময়ে ভুট্টা, সূর্যমুখী চাষ করা যায়। তামাক চাষের বড় সমস্যা হচ্ছে, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের নগদ অর্থ থেকে সব রকম সহযোগিতা করে চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। যার ফলে তামাকের চাষ যতোটা কমার কথা সেভাবে কমছে না। সূর্যমুখীর মতো নতুন ফসলগুলোকে এক্সটেনশন করতে হবে। ভুট্টা যেমন অনেকটাই এগিয়েছে।সূর্যমুখী, ভুট্টার স্থায়ী ক্রেতা তৈরি করতে পারলে, তামাক থেকে সরে আসবে কৃষক। ক্রয় কেন্দ্র তৈরি হলে, নতুন ব্যবসা গড়ে উঠবে। তখন কৃষকদের উৎপাদিত এসব ফসল বিক্রি করতে সমস্যা হবে না।
তবে, কোনো তামাক চাষীকে তামাক চাষ থেকে সরিয়ে আনার নির্দিষ্ট তথ্য নেই। কিছু তামাক চাষী হয়তো ভূট্টা চাষ করেছেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশীদ বলেন,যে কোনো ফসল চাষে প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। তামাক একটি ক্যাশ এবং নিরকোটিক ক্রোপ। এই অঞ্চলে অন্য ফসল চাষে লাভ বেশি। সব রকম জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়। সব দিক থেকে তামাকের চেয়ে অনেক খরচ কম হয় ভুট্টা,সূর্যমুখীর মতো ফসলে। ফুলবাড়ি উপজেলায় ৫০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১২ মণের বেশি বীজ পাওয়া যায়। সূর্যমুখি চাষে তামাকের মতো হেল্থ হ্যাজার্ড নাই। দুই ফসলি জমিতে চাষ করলে, ওটা তিন ফসলি জমি হবে। এক কেজি সূর্যমুখীর বীজের বাজার মূল্য ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক কেজি বীজ দিয়ে দুই বিঘা জমি চাষ করা যায়। বালারহাট নভরত্নে একই স্থানে ১০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।
অদূর ভবিষ্যতে যদিও এইসব অঞ্চলে তামাক চাষ কমানো সম্ভব হলে তবেই কিছুটা সুফল পাওয়া যাবে। এসব অঞ্চলে কবে কমবে তা বলা না গেলেও, তামাক চাষ ধীরে ধীরে বড় বড় চরাঞ্চলে ছড়াবে বলে দায়িত্বশীল একটি সুত্র জোড় দাবি করছে।